Breaking News
Home / Breaking News / কবি দেবাশীষ দাস এর গল্প “কুলদীপ”

কবি দেবাশীষ দাস এর গল্প “কুলদীপ”

গল্প : কুলদীপ
লেখক : দেবাশীষ দাস
তারিখ : ০৯/১২/২১ ইং

মনু নদীর তীরে ছৈলেংটা গ্রামে দাস কলোনি পাড়ায় মথুরা মোহন দাসের ছোট্ট কোঠা-বাড়ি। মথুরা মোহন দাস পাড়ার লোকের কাছে মথুর বাবু নামে পরিচিত। মথুর বাবুর পিতা রামমোহন দাসের অর্থনৈতিক অবস্থা বেশ ভাল ছিল। রামমোহন দাসের দুই একর বিস্তৃত একটি ফলের বাগান ছিল। ফল বাগানে আম জাম কাঁঠাল কলা লিচু নারিকেল পেয়ারা খেজুর আনারস জলপাই প্রভৃতি ফলের গাছ ছিল। তিন একর চাষের জমি ছিল। গোয়াল ভরা গোরু ছিল। রামমোহন সারা বছর দুধ ও ফল বিক্রি করতেন। চাষের জমিতে ধান পাট ও মিষ্টিআলু চাষ করতেন। বছরের খোরাক রেখে উদ্বৃত্ত ধান বিক্রি করতেন। পৈতৃক সম্পত্তির একমাত্র উত্তরাধিকারী মথুর বাবুর সচ্ছল সংসার ছিল। কিন্তু মনু নদীর ভাঙনে মথুর বাবুর পরিবারে নেমে আসে চরম দারিদ্রতা। রামমোহন দাসের সম্পূর্ণ ফলের বাগান ও চাষের জমির সিংহ ভাগ নদী গর্ভে তলিয়ে যায়। এক বিঘার থেকেও কম জমি অবশিষ্ট ছিল। ওইটুকু জমিতে চাষবাস করে সংসার চালানো সম্ভব ছিল না। মথুর বাবু চাষবাসের পাশাপাশি মনু নদীতে মৎস্যশিকার ও দিনমজুরের কাজ শুরু করেন।

মথুর বাবু সংসার চালানোর জন্য কঠোর পরিশ্রম করতেন। কিন্তু এটা মথুর বাবুর দুঃখের কারণ ছিল না। মথুর বাবুর মনে একটাই দুঃখ ছিল, সেটা হল তার পুত্র সন্তান নেই, বংশধর নেই। মথুর বাবুর তিন কন্যা ছিল কাদম্বিনী সৌদামিণী ও অনামিকা। তিন কন্যা ও স্ত্রীকে নিয়ে অনাহারে অর্ধাহারে মথুর বাবুর সংসার চলছিল। কিন্তু মথুর বাবুর কাছে পুত্র সন্তান না থাকার দুঃখের তুলনায় এগুলো ছিল তুচ্ছ বিষয়। মথুর বাবুর পিতা রামমোহন মৃত্যুকালে বলেছিলেন, ‘বংশ রক্ষার দায়িত্ব তোর, বংশ রক্ষা করিস বাবা।’ মথুর বাবু মনে মনে ভাবতেন বাবার শেষ ইচ্ছা কি তবে পূর্ণ হবে না!

১৯৮০’র দশকের শেষের দিকে মথুর বাবুর স্ত্রী জাহ্নবী আবার গর্ভবতী হলেন। ১৯৮৯ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে এক কনকনে শীতের রাতে দাস পরিবারে খুশির জোয়ার এসেছিল। মথুর বাবুর বংশের প্রদীপ পুত্র সন্তানের জন্ম হয়েছিল। পাড়াপড়শি আত্মীয় পরিজন সকলেই খুব আনন্দিত হয়েছিলেন। সবাই এটা ভেবে খুশি হয়েছিলেন যে, ‘মথুর বাবুর বংশ রক্ষা হল, এই ছেলে মথুর বাবুর বংশ এগিয়ে নিয়ে যাবে।’ সেদিন কে বা জানত এই ছেলের ভবিষ্যত কি! পুত্র সন্তানের আগমনে সংসারের সব অভাব অনটনের কথা ভুলে মথুর বাবু আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েছিলেন। মথুর বাবু নিজ সাধ্যের বাইরে গিয়ে ধার দেনা করে বেশ বড় করে সামাজিক আচার অনুষ্ঠান করেন। মথুর বাবুর খুড়তুতো বোন লিলাবতী সোহাগ করে নবজাতকের নাম রেখেছিলেন কুলদীপ।

পরিবারের একমাত্র ছেলে সন্তান বলে একটু বেশি আদর যত্নে বড় হতে থাকে কুলদীপ। সংসারের অভাব অনটনের মাঝেও মথুর বাবু ছেলের জন্য পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা করতেন। মা এবং দিদিরা কুলদীপকে সর্বদা চোখে চোখে রাখতেন। পরিবার পরিজনেরা সর্বদা কুলদীপকে সব বিপদ থেকে আগলে রাখতেন। সন্দেহভাজন দুষ্ট লোক ও অপদেবতার কু-নজর থেকে কুলদীপকে সুরক্ষিত রাখার চেষ্টা করতেন। পাড়ার অন্যান্য শিশুদের সাথে তাকে খেলাধুলা মেলামেশা করতে দেওয়া হতো না। বছরে দু এক বার মায়ের সাথে মামার বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া আর দুর্গা পুজোয় মা ও দিদিদের সাথে ঠাকুর দেখতে যাওয়া ছাড়া তার বাড়ির বাইরে যাওয়া হতো না। কুলদীপের প্রাক শৈশব জীবন এভাবে বাড়ির চৌহদ্দির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। কারণ তার সুরক্ষাই ছিল দাস পরিবারের প্রধান কর্তব্য। সে যে কুল রক্ষাকারী, কুলদীপ!

Powered by themekiller.com