Breaking News
Home / Breaking News / কবি অনিক ইসলাম রানা এর কবিতা ” পুরুষ “

কবি অনিক ইসলাম রানা এর কবিতা ” পুরুষ “

#দৈনিক_কবিতা_প্রতিযোগিতা

শিরোনামঃ— “পুরুষ”

কলমেঃ— অনিক ইসলাম রানা

তারিখঃ— ০৯/১২/২০২১ইং…

—পুরুষ মানুষকে ঠিক বিশ্বাস করা যায় না..??

—আমার বাবা’র অসুস্থতার সময় আমার যে পুরুষ বন্ধুটি রাতের পর রাত আমার সাথে জেগে ছিলো, তাকে আমি অবিশ্বাস করতে পারবো না কোনোদিনই!

—পুরুষ মানুষ খুব সুযোগসন্ধানী..??

—যে পুরুষ বন্ধুর কাঁধে মাথা রেখে ঘুমাতে ঘুমাতে আমি ঢাকা থেকে সুদূর বগুড়া পর্যন্ত গেলাম, সারারাত ট্রেনে একসাথে থাকলাম। সে চাইলেই তো সুযোগ নিতে পারতো। নেয়নি তো!

—পুরুষ মানুষ কখনো সৎ হতে পারে না.??

—আমার বাবা প্রকৌশলী ছিলেন। প্রাইভেট কোম্পানীতে চাকুরি করতেন। কোটি কোটি টাকার প্রোজেক্ট করেছেন। অথচ জীবনে এক টাকাও ঘুষ খান নি। যার ফলশ্রুতিতে মৃত্যুর আগে তার চিকিৎসা করাতে গিয়ে আমাদের মানুষের কাছে হাত পাততে হয়েছিলো। সেই বাবা নামক পুরুষটিকে আমি অসৎ ভাবি কি করে!

—পুরুষ মানুষ মানেই দুঃশ্চরিত্র.??

—একদিন ঝুম বৃষ্টির ভেতর এক পুরুষ বন্ধুর সাথে বাসায় ফিরছিলাম। ঘড়ির কাঁটায় রাত তখন এগারোটা। নীল স্যালুফিনে রিক্সার সামনের অংশ ঢেকে বৃষ্টিতে ভেজার হাত থেকে বাঁচার চেষ্টা করছি। ঐ বৃষ্টির রাতে আমার নিঃশ্বাস দূরত্বে বসা পুরুষ বন্ধুটা চাইলেই তো আমার শরীরে হাত চালিয়ে দিতে পারতো। দেয়নি তো!

—পুরুষ মানুষরা স্বার্থপর…??

—কতোবার কতো পুরুষ পাবলিক ট্রান্সপোর্টে নিজের জায়গা ছেড়ে দিয়ে অনুরোধ করে আমাকে বসতে দিয়েছে। যে অচেনা অজানা একটা মানুষের জন্য নিজের জায়গা ছেড়ে দেয়, সেই পুরুষকে আমি স্বার্থপর ভাবি কিভাবে বলুন!

—পুরুষ মানুষকে ঠিক ভরসা করা যায় না…??

—আমার বাবার এ্যাকসিডেন্টের পর মৃত্যুর আগপর্যন্ত সাত আট বছর চাকুরি ছিলো না। টানাপোড়েনের সংসারে বাবার কাছে যখনই টাকা চাইতাম, চোখবন্ধ করে জানতাম নিজে না খেয়ে থাকলেও আমাকে যেভাবেই হোক টাকা যোগাড় করে দেবে। সেই বাবা নামক পুরুষটা কি ভরসার অযোগ্য!

—পুরুষ মানুষ মাত্রই বদনজরে তাকায় মেয়েদের
দিকে…??

—একদিন নীল শাড়ি পরে এক পুরুষ বন্ধুর সাথে সন্ধ্যেবেলায় রিক্সা চড়ে যাচ্ছিলাম। সে হঠাৎ করে বললো, তোমাকে এক মিনিট দেখতে দিবে? আমি জানি, আজ অবধি এমন তুমুল মুগ্ধতা নিয়ে কোনো পুরুষ আমার দিকে তাকায় নি। সব পুরুষের চোখে কাম লালসা থাকে না আমি বিশ্বাস করি!

—পুরুষ মানুষ মেয়েদের সম্মান করতে জানে না…??

—এক পুরুষ আমাকে ভালোবাসে, একতরফাভাবেই ভালোবাসে। তাকে কোনোভাবেই আমার জীবন থেকে তাড়াতে পারছিলাম না বলে খুব অপমান করেছিলাম। সে মাথা পেতে সব অপমান সহ্য করেছিলো। তখন আমার রাগ আরো বেড়ে গেলো। কেনো সে আমার কোনো কথার প্রতিবাদ করছে না? সে আমাকে চমকে দিয়ে বললো, নারীরা তো দেবী হয়, দেবীর সামনে কখনো উঁচু গলায় কথা বলতে নেই!

—পুরুষের কাছে কোনো মেয়ে নিরাপদ নয়…??

—সেদিন ছিলো একুশে ফেব্রুয়ারি। এতো ভীড় বইমেলায়। আমার সাথে যে পুরুষ বন্ধুটা ছিলো, সে আমাকে না ছুঁয়েই আমার দুই পাশে হাত রেখে ভীড় থেকে আমাকে বের করে আনলো, যাতে অন্য কোনো পুরুষের সুযোগসন্ধানী নোংরা হাত আমাকে ছুঁতে না পারে! সেই পুরুষ বন্ধুর কাছে কি আমি নিরাপদ ছিলাম না!

—পুরুষ মাত্রই ডোমেনেটিং স্বভাবের…??

—আমার এক পরিচিত পুরুষ, বিবাহিত জীবনে খুব সুখী। সে কখনো তার সহধর্মিণীর চলার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় না, তার স্বপ্নগুলোকে সম্মান করে। সহধর্মিণীর চেয়ে সে তাকে সহমর্মী ভেবেছে খুব। দু’জন সহযোদ্ধা হয়ে সংসারে টিকে থাকার জন্য স্বামী-স্ত্রীর চেয়ে বন্ধু হয়ে উঠেছে ঢেড় বেশি। সেই পুরুষের রক্তে তো ডোমিনেটিং স্বভাব নেই!

—পুরুষ মাত্রই ধর্ষক…?

— যখন কোনো স্ত্রী ভীষণ আত্মতৃপ্তি নিয়ে বলে “আমার স্বামীর ভেতর আমি আমার বাবার ছায়া দেখতে পাই”, সেই পুরুষ আর যাই হোক ধর্ষক হতে পারে না কখনোই!

পুরুষ মানুষ কথা দিয়ে কথা রাখে না?
-প্রেমিকার কথা রাখবে বলে যে প্রেমিক সিগারেট ছেড়ে দেয়, সে কি কথা রাখে নি!

—পুরুষ মানুষ কঠিন হৃদয়ের অধিকারী…??

—আদরের বোনকে হাস্যজ্জ্বল মুখে শ্বশুরবাড়িতে
পাঠিয়ে যে ভাই আড়ালে দাঁড়িয়ে চোখের জল ফেলে, সেই ভাই নামক পুরুষটা কি কঠিন!

—এ পৃথিবীতে যেমন ধর্ষক পুরুষ আছে,
দুঃশ্চরিত্র, সুযোগসন্ধানী, স্বার্থপর,
নোংরা পুরুষ আছে,
তেমনই আছে ভরসা করার মতো
‘বাবা’ নামক পুরুষ,
বিশ্বাস করার মতো
‘প্রেমিক’ নামের পুরুষ,
বিপদে পাশে পাবার মতো
‘বন্ধু’ নামক পুরুষ,
প্রচন্ডভাবে আগলে রাখার মতো
‘ভাই’ নামের পুরুষ!

বিঃদ্রঃ— (অবিশ্বাসী পুরুষদের মহামিছিলে যেনো
এইসব সত্যিকারের পুরুষেরা হারিয়ে না যায়,
তাই কবিতায় থেকো ঋদ্ধ পুরুষ,
থেকো আমার শ্রদ্ধায়,
মননে আর তুমুল ভালোবাসা ও ভরসায়)

A written by 🦋❀꧁Anik꧂❀🦋

**********************************************

Powered by themekiller.com