Breaking News
Home / Breaking News / কবি স্বপন কুমার রুইদাস এর কবিতা ” এ ঈশ্বরের পৃথিবী, এ সবই আমার”

কবি স্বপন কুমার রুইদাস এর কবিতা ” এ ঈশ্বরের পৃথিবী, এ সবই আমার”

কবিতা — এ ঈশ্বরের পৃথিবী, এ সবই আমার
কলমে — স্বপন কুমার রুইদাস
তাং – ৭/১২/২১

আমার সম্মুখে সবুজ গাছ গাছালীতে ভরা সুউচ্চ পাহাড় , দাঁড়িয়ে রয়েছে কতযুগ ধ্যানমগ্ন ঋষিকুলের মতো গায়ে গা মিশিয়ে মানব বন্ধনের মত করে দূরে দূরে ! এখানে সবার অবারিত দ্বার!
ভাবছিলাম এসব কার ?
আমার আমি বলে উঠল -“এ আমার দেশ, এসবই আমার”।
আমার সামনে সবুজ বনানী, নানা ফুল ফল পশু কীটপতঙ্গ পাখির কূজনে মুখরিত প্রকৃতির সবুজ রাজপ্রাসাদ!হাঁটছি সেই চিরবসন্তের অপূর্ব ফাল্গুনী জ্যোৎস্নার ভিতরে । এ যেন আলো-ছায়ায় মোড়া ঈশ্বরের অদ্ভুত এক জগৎ! সৃষ্টির কত ইতিহাস কত রহস্য বুকে জমিয়ে রেখেছে যুগ থেকে যুগান্তর !
ভাবছিলাম এসব কার ?
আমার আমি বলে উঠে, – এ আমার দেশ এসবই আমার !
আমার সম্মুখে বয়ে চলেছে আমার প্রিয় নদী,–এঁকে বেঁকে মিশে গেছে দূর থেকে দূরে!
দিকচক্রবালকে চিরে রূপকথার অলৌকিক প্রান্তরে।
চিত সাঁতারে আকাশ দেখতে দেখতে দুই হাত দিয়ে দু’কূল ছুঁয়ে বাতাস মাখতে মাখতে কুলুকুলু রবে বয়ে চলেছে ক্লান্তিহীন। বুকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর শপথে কাজ তার শুধু বয়ে চলা শুধু বয়ে চলা!
প্রশ্ন করি, – ওগো নদী,তুমি কার?
কার নির্দেশে বয়ে চলো অনিবার !
উত্তর দেয়না নদী। হয়তো দেয়,তার ভাষায় ।
আমার আমি বলে ওঠে কি প্রয়োজন জিজ্ঞাসীবার,
ওর ভাষা বোঝার ক্ষমতা নেই তোমার।
তুমি তো জান এ আমার দেশ এ নদী জল সবই আমার।

দেখছি চারিদিকে পৃথিবীর দেশে দেশে মানব মনের স্বপ্ন কল্পনায় গড়ে ওঠা কত অলৌকিক সুন্দর রাজপ্রাসাদ অট্টালিকা স্মৃতিসৌধ রাজপথ গির্জা মসজিদ মন্দির
বৌদ্ধমঠ আরও কত কি অনুপম সৃষ্টি মানুষের!
তাদের কিছু কিছু নাম না জানা শিল্পীর কব্জির ছেনি হাতুড়ীর ঘায়ে পাহাড় কেটে কেটে তৈরি ! অলৌকিক ঐশ্বরিক শিল্পগুণে সমৃদ্ধ মানব মননের নানা ঘরানার ভাস্কর্য, স্থাপত্য শিল্পের অপূর্ব জ্যোৎস্নামণ্ডিত অনন্য পৃথিবী! কত অজানা ইতিহাস, ধর্ম, জীবনশৈলী ঘুমিয়ে আছে এসবের মধ্যে পাথরের খাঁজে খাঁজে কে জানে! জানে হয়তো নীরব নিথর অতীত ।
আহা! কি সুন্দর অতি দুর্লভ সেসব !
দেখি তাতে অকল্পনীয় সুন্দর সুন্দর পোষাকে-আষাকে সুসজ্জিত নানা ধর্ম ভাষার কত সুন্দর সুন্দর নরনারী, এসবই তো আমার ঈশ্বরের অতি সুন্দর বৈজ্ঞানিক মননের আশ্চর্য বিভূতি! ভাবছিলাম এসব কার?
আমার আমি বলে ওঠে, – এসবই ঈশ্বরের! ঈশ্বরের সৃষ্টি এ ব্রহ্মাণ্ড, ব্রহ্মাণ্ডের কোলে আমার পৃথিবী পৃথিবীর কোলে আমার দেশ , এসবই আমার ।

দেখছি পৃথিবীর দৃঢ় আলিঙ্গনে অপরূপা চিৎ প্রকৃতির বিচিত্র দেহবল্লরীতে মাইলের পর মাইল সুন্দরী গরান শাল মহুয়া আম জাম আমলকীর সমন্বয়ে মহাসাম্যের মহাসাম্রাজ্য । কত বিচিত্র কীটপতঙ্গ সরীসৃপ পাখী জীবজন্তুর শান্তির আবাস!এক অনন্য সাম্যবাদী সহাবস্থান। দেখে ভাবছি,- যুদ্ধ ধ্বংস করা ছাড়া কি শিখেছে মানুষ এদের থেকে!
যুগ যুগ ধরে ঈশ্বর ও দেবদেবীর আরাধনার্থে পৃথিবীর আনাচে কানাচে কত গির্জা মন্দির মসজিদ মঠের জঙ্গল, বিস্তৃত হয়ে প্রবেশ করেছে প্রতি ঘরে শ্রদ্ধায় ছবি মূর্তি ও পটে! শিক্ষার মান আজ অভূতপূর্ব , জ্ঞানের পরিধি আকাশছোঁয়া। তবুও কত যুদ্ধ মানুষে মানুষে, কত বিভেদ কত রক্ত ঝরে আজও । অথচ মহাঅরণ্যের মহাসাম্যের মহাসমন্বয় থেকে শিক্ষা নিয়ে মানুষও গড়তে পারতো ধন সম্পদের প্রাচুর্যে ভরা এক অনন্য সভ্যতার স্বর্গ!!
এরই মধ্যে পশ্চিম আকাশে ডুবে যাচ্ছে সূর্য,আলোর রঙবেরঙ বর্ণালীতে অপরূপ সজ্জায় মেঘপুঞ্জকে সাজিয়ে ধীরে ধীরে সন্ধ্যার আঁচল সরিয়ে কালো ডানা অন্ধকার নিয়ে নেমে আসছে রাত। নিঃশব্দে কুয়াশার মত পৃথিবীর পরে! আহা ! কি অপূর্ব সুন্দর রুটিনে বাঁধা পৃথিবীর দিনলিপি!
কোন্ দূর দেশ থেকে মৃদুলয়ে বয়ে চলেছে মদিরা বাতাস বনাঞ্চল আন্দোলিত করে আমাকেও ছুঁয়ে। এসময়ে পৃথিবীকে মনে হচ্ছে কোন মায়াবিনী নারী !যে জড়িয়ে আমাদের মায়ের মত পরম স্নেহে সকলকেই !
ক্রমেই গ্রাস করছে ব্রহ্মাণ্ডীয় অন্ধকার পৃথিবী শরীর, ফুটে উঠছে শত সহস্র তারাফুল অসীম অনন্ত হাট করে খোলা নীলাকাশে !
সেই শৈশব থেকেই দেখছি রহস্যে ভরা রাতের আকাশ , অমোঘ শৃঙ্খলায় নানা জ্যামিতিক বিন্যাসে ওরা নীরবে মিটিমিটি চায়।
নানা রূপে চাঁদ সূর্য গ্রহ তারারাজী ছায়াপথ সপ্তর্ষিমণ্ডল কালপুরুষেরা নিয়মিত আসে যায়, কি যে বলে কি যে চায় ওরা ইশারায়?
ভাবি কত রূপকথা ঠাকুরদা ঠাকুমার গল্পের বিনুনিতে এদের নিয়ে ! কত রাজারানী রাজকুমার রাজকুমারী পরী অপ্সরাদের অলৌকিক রাজপুরীর অনুপম ঠিকানা!আজও আমার আদিম পূর্বজদের চোখের বিস্ময়াবিষ্ট চাহনি আশীর্বাদ লেগে আছে এদের চোখে মুখে !
এদের দেখি আর ভাবি এসব কার ? আমার আমি বলে উঠে ,- এসবই জ্যোতির্ময় ঈশ্বরের দেহ কণা ! ঈশ্বর কণায় সৃষ্ট যত আমি জড়জীব এ ব্রহ্মাণ্ড, ব্রহ্মাণ্ডের কোলে আমার পৃথিবী, পৃথিবীর কোলে আমার দেশ, এসবই আমার।
ধীরে ধীরে ব্রাহ্মমুহুর্তের আশীষ ছড়িয়ে পৃথিবী এখন ভবিষ্যতের গর্ভ থেকে আনছে নতুন দিন ।চারিদিকে ঈশ্বরের মহাসাম্রাজ্যের এক চিলতে ভূমির পরে আমি । অদূরে সোনালী রোদ ঠিকরে পড়ছে জাতীয় পতাকায়! পতপত করে উড়ছে বাতাসে অনাবিল ,সাম্য মৈত্রী স্বাধীনতার বার্তা নিয়ে!
তার দিকে মাথা নুইয়ে আমি বললাম , – ‘এ আমার গর্ব আমার অহংকার ।কত শত বীর শহীদদের রক্তে ও মহান মনীষী মনন স্রোতে এর জন্ম, ধন্য আমি ধন্য আমার দেশ’।
আমার আমি বলে উঠলো, – ‘ শুধু নিজের দেশ নয় কবি! যখন সবার একই ঈশ্বর,একই ঈশ্বরের সৃষ্টি ব্রহ্মাণ্ড,ব্রহ্মাণ্ডের গর্ভে পৃথিবী, পৃথিবীর কোলে আমার দেশ!তাই এ আমার পৃথিবী, এর সবকিছুই আমার ‘!!!

Powered by themekiller.com