Breaking News
Home / Breaking News / কবি মোহাম্মদ জাহিদ হোসেন এর গল্প “তবুও জীবন”

কবি মোহাম্মদ জাহিদ হোসেন এর গল্প “তবুও জীবন”

♦তবুও জীবন♦
মোহাম্মদ জাহিদ হোসেন
***********************

গত ২৬শে নভেম্বর হঠাৎ রাতে আমার হার্টে প্রচন্ড ব্যথা উঠে কি করবো বুঝতে পারছি না। এ দিকে বুকের ব্যথাও কোন ভাবে কমছে না। কোন উপায় না পেয়ে বাসার কাছাকাছি মুগধা সরকারী হাসপাতালের কার্ডিয়াক বিভাগে যায় সেখানে ইসিজি করার পরে ডাক্তার সাফ জানিয়ে দিলেন আপনার তো হার্ট এ্যাটাক করেছে, “আপনি দ্রুত জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালে যান।”

সেই মোতাবেক রাতেই সেখানে গেলাম কিন্তু এ দিকে বুকের ব্যথার চাপ কোন ভাবেই কমছে না। হৃদরোগ হাসপাতালের সিসিইউতে নেওয়া হলো সেখানে ডাক্তাররা তাদের করনীয় সব কিছুই করলো আর সাথে সাথে এনজিওগ্রামের কথাও জানিয়ে দিলো কিন্তু সমস্যা হলো এনজিওগ্রাম সহসা করার যাবে না কারন ওদের সিরিয়াল বেশ লম্বা।

অগত্যা ব্যথা সহ্য করতে না পেরে বেসরকারী ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে প্রফেসর ডাঃ লিয়াকত আলী দেখলেন জরুরী বিভাগে, সাথে সাথে উনি এনজিওগ্রামের কথা জানিয়ে দিলেন এবং পরের দিন হাসপাালে ভর্তি হবার জন্য উপদেশ দিলেন।

কিন্তু এখানে বাধ সাধলো আমার চরম আর্থীক অবস্থা। যে দিন আমি ইব্রাহিম কার্ডিয়াক এর জরুরী বিভাগে গেলাম সেখানে হঠাৎ করে আমার স্কুলের বন্ধু রিমন হাজির ও আমাকে বলল,”চিন্তার কোন কারন নেই টাকাটা আমরা দিবো।”

যে দিন এনজিওগ্রামের জন্য ভর্তি হবার জন্য হাসপাতালে গেলাম সে দিন আমার বন্ধু দিপু এসে হাসপাতালের কাউন্টারে এনজিওগ্রামের সমস্ত টাকা পরিশোধ করলো।

তার পর আমাকে নিয়ে যাওয়া হলো আমার জন্য নিদৃষ্ট বেডে। সাথে সাথে গায়ে পড়িয়ে দিলো হাসপাালের নিদৃষ্ট পোশাক আমার মনে হতে লাগলো ফাঁসির আসামীকে যে ভাবে জম টুপি পড়ানো হয় সে ভাবেই যেন আমাকে পোশাক পড়ানো হচ্ছে। আমার বন্ধু দিপু যে সময় আমার কাছ থেকে চলে গেলো তখন নিজেকে ভীষন অসহায় মনে হতে লাগলো। তবু সে সময় আসলে নিকট জনের শূন্যতাকে তেমন ভাবে বুঝিনি কারন সে সময় আমার বেডের পাশে আমার স্ত্রী ছিলো। ওর দিকে তাকিয়ে বেশ ভরসা পেলাম।

আস্তে আস্তে সময় গড়াতে লাগলো সেবিকারা তাদের কার্য্যকলাপ ইতোমধ্যে আরম্ভ করে দিয়েছে। হাতে ক্যানোলার লাগানো হলো, তা দিয়ে স্যেলাইন চলছে। মুখে অক্সিজেন, বিরামহীন ভাবে মনিটর পর্যবেক্ষণ করছে আমার হার্ট।কেমন যেন একটা ভীতিকর পরিবেশ।একটু পরে আমার স্ত্রীও চলে গেলো কারন ভিজিটিং আওয়ার শেষ।

পড়ে রইলাম আমি আর আমার সাথের স্মৃতি। বেশ অসহয় লাগছে নিজেকে।মনে হলো বিরান শূন্য মরুভূমির মাঝে আমি একা। হাসপাতালের পাশেই শাহবাগ মোড় অনেক মানুষের কোলহল,গাড়ীর বিরামহীন শব্দ তার পরেও কিছুতেই হাসপাতালের দেওয়াল ভেদ করে কিছুই দেখতে পারছি না এ যে কি যন্ত্রনা কর অনুভূতি তা আসলে লেখার মাধ্যমে প্রকাশ করা সম্ভাব নয়।
বার বার চোখের সামনে ভেসে উঠছে প্রিয় মুখ গুলো। সবাইকে চোখের সামনে দেখছি কিন্তু কাউকেও কিছুই বলতে পারছি না।
এ অবস্থায় মন বার বার চাইছে প্রিয় মুখ গুলোর সান্নিধ্য কিন্তু বাস্তবতা যে কঠিন দেওয়াল আমার সামনে তুলে ধরেছে সেটা টপকানের কোন সাধ্য আমার নেই।

পরের দিন সকল বেলা আমাকে হুইল চেয়ারে করে নিয়ে যাওয়া হলো ক্যাথল্যাবে যাবার সময় আমার সমনে আমার দুই মেয়ে দাড়িয়ে ওদের চোখ গুলো অজানা আতঙ্কে ছল ছল করছে। আমার বন্ধু দিপুর চোখটাও লাল দেখলাম।

অবাক বিশ্বয়ে দেখলাম আমার স্ত্রী কি ভাবে আমার সামনে তার চোখের জল সামলিয়ে শক্ত থাকার নিখুঁত অভিনয় করছে। আমি বুঝেও কিছুই বুঝতে চাইলাম না।

তার পর শুরুহলো আমার এনজিওগ্রাম। কিন্তু এনজিওগ্রামের এমন ভয়াবহ ফলাফলের জন্য আসলে আমরা কেউ প্রস্তুত ছিলাম না। একটা নয় দুটো নয় চার চারটি ব্লক তাও আবার এলইডি সহ। ডাক্তার সরাসরি ওপেন হার্ট অপারেশনের কথা জানিয়ে দিলেন।
মনে হলো মাথার উপর আকাশটা ভেংগে পড়লো। কারন ওপেন হার্ট করার জন্য প্রচুর টাকার প্রয়োজন। এ জন্য ডাক্তারের কাছ থেকে দু একদিনের সময় নিলাম কিন্তু ডাক্তার কোন রকমের ঝুঁকি নিতে চাইলেন না কারন হার্টের অবস্থা খুবই নাজুক অন্য দিকে বাস্তবতাকেও অস্বীকার করা যায় না।

এনজিওগ্রাম শেষে আমাকে আবার আমার বেডে নিয়ে যাওয়া হলো।

আমার ক্লান্ত দেহটা আস্তে আস্তে ঢলে পড়লো গভীর শুন্যতার মাঝে…..কত সময় যে গভীর ঘুমের মাঝে ছিলাম তার হিসাব আমার কাছে নেই।

হঠাৎ কপালে শীতল কিছুর ছোঁয়ায় চেতনা ফিরে পেলাম।

সমস্ত ক্লান্তহীনতাকে পাশে রেখে ভারী চোখ দুটি মেলে তাকালাম,

দেখলাম আমার কপালে ছোট হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে আমার ছোট মেয়েটি।
আর ওর চোখ দুটি পানিতে ছল ছল করছে,

হয়তো যে কোন সময় তা ঝড়ে পড়বে অঝর ধারায়।

এই প্রথম নিজের বুকের মাঝে অনুভাব করলাম ভােলাবাসার এক অন্য রূপ,
দেখলাম শর্তহীন ভালোবাসার এক জীবন্ত অবায়ব।

আমি নির্বাক হয়ে ছিলাম।
কেমন যেনো নিজের মাঝে বেঁচে থাকার এক আকূলতা আমাকে গ্রাস করছে।

মনে হলো আধার ঠেলে যেনো উদয় হলো নতুন এক সোনালী দিনের।
এটাই হয়তো বা বেঁচে থাকার মানে।

এর পরে আরো একদিন হাসপাতালে থাকার পরে বাসায় আসলাম সাময়িক সময়ের জন্য। কারন বেঁচে থাকার জন্য ওপেন হার্ট অপারেশ করতেই হবে আর তার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন। আমার মতোন মানুষের পক্ষে এতোটাকা জোগাড় করা অসম্ভাব ব্যাপার। আমার মনে হয় টাকা জোগাড় করার কঠিন কাজের চেয়ে নিঃশব্দে মরে যাওয়ায় শ্রেয়।

কারন প্রতিদিনের হার্টের অসহ্য ব্যথা আর সহ্য করতে পারছি না। এ ভাবেই চলছে আমার দিন। তবুও জীবন চলছে জানি না কতো সময় এ ভাবে থাকা যাবে…..।

লেখার ধরণঃ ছোট গল্প
পোস্টের তারিখঃ ০৭-১২-২০২১

Powered by themekiller.com