Breaking News
Home / Breaking News / কবি অনমিত্র সান‍্যাল এর” একটা বাজে গল্প, কিম্বা নির্জন সৈকতে”

কবি অনমিত্র সান‍্যাল এর” একটা বাজে গল্প, কিম্বা নির্জন সৈকতে”

একটা বাজে গল্প
কিম্বা নির্জন সৈকতে

অনমিত্র সান‍্যাল

৩১/০৭/২০২১

পুন‍্যিপুকুর বুজে গেছে কবেই, দিদিরা এখন দিদিমা.. অথচ আমি এখনও রক্তাক্ত হই রোজ,প্রেমের ছন্ন কাঁটায়..

মস্তিষ্কের বড়ো কাছে..টুংটাং আওয়াজ করে মারাত্মক জীবন্মৃত কিছু ব‍্যর্থ তাগিদ..সকাল থেকে শুধু তোমায় মনে পড়ে।থার্ড ইয়ারে দীঘার নির্জন সৈকত কিম্বা হোটেল সী-ভিউ..না না এর বেশী কিছু বলবো না…পরশু-ই তো তোমার সাথে কথা হলো..জমিয়ে সংসার করছো বলো..?

কি কো-ইনসিডেন্স মাইরি..একই কলেজে তোমার ছেলে..সেও এখন থার্ড ইয়ার..সৌম্য , তাই তো?ভারি মিষ্টি নাম..তুমি চিন্তা কোরো না..এই মুখে কুলুপ দিলাম…

মতলবী মন মহাব্বত খোঁজে যখন তখন।আগাপাশতালা ইগো আর ইস্ক্,
খানিকটা হুইস্কি আর সোডার মতো..যতক্ষণ দূ্রে আছে.. ধোপদূরস্ত জেন্টেলম‍্যান, একসাথে ভাবতেই যেও না,বিলাসিতা শিকেয় তুলে রেখো, ব্রহ্ম চেয়ো না।

আমার একটা মুল্লুকী ঢং ছিল,মেয়েরা পটতো যখন তখন কিন্তু ঐ যে ইগো, ঝঞ্ঝাবাতের মতো এসেই কেটে পড়ার ধান্দা। চাবুকি কথা বার্তা-য় এক চিলতে রোদের মতো চিকচিকে বাহু-বন্ধনের সম্ভাবনা ফুটেছে কি ফোটেনি, অমনি উড়িয়ে দিলে..ফুউউউ,ব‍্যস প্রেমের দফা রফা। অবশ্য ফুঃ না দিলেও পারতে ,মন উড্ডীনই ছিলো। প্রেমে পড়াটা খুব একটা কঠিন ছিলো না..আরে বাধা- টা কোথায় ? একহাতে তো আর তালি বাজে না..বুঝলে কিছু…? নিশ্চিন্ত হলে বলো..!
একপেশে তালি আর কত বাজায়..?মাঝে মাঝে নির্ঘুম রাতে,আজও বাসুকী ফনা তুললে বলি,কোন আশ্লেষে ফুলের মতো ফুটি, তোর আগুনে ছোঁয়া তোর নিজের কাছে রাখ…আমি এখন জলঢোঁড়া,অদ্ভুত বন্ধনে নির্বাসিত, শুধু ডুবছি,ডুবোজল ছিলো না, তাই কনুই ,বুক, ডুবে গেলো,চিবুকে এসে আটকে গেলাম।

মনে হতো সামনে সাগর,ধুম্রনীল জল,ভালোবাসা-য় বড্ড ভয়, তাই তুলে রেখেছি পাথরের মতো চাঁই হয়ে যাওয়া ভালোবাসা.. রঙিন স্বপ্নে মুড়ে রেখেছি.. কিন্ত ফ‍্যাকাশে স্বপ্নে লেগেছিলো বৃষ্টির দাগ,ভেবেছিলাম কেউ হয়তো স্বপ্ন খুলে দেখবে.. বসবে হয়তো পাশে, বলবে–আমিও কষ্ট পেতে ভালোবাসি..কিন্ত দিন পেরোতে চললো সূর্যের রঙ হলুদ হলো,এখনো তো কেউ এলো না ,স্বপ্নের রঙিন কাগজ এখনো কেউ খোলেনি,কষ্ট পেতে কে বা চায়,বলো..!

আমার যিনি অর্ধাঙ্গিনী, তিনিও আমার এই কদলী কান্ডের মতো সারাক্ষন উপুড় হয়ে পড়ে থাকাকে কদাচিৎ প্রশংসা করেছেন কিনা কে জানে!
আর সেখানেও আমার এই মন্থরমার্কা চেহারা ইগোপ্রদীপে সারাক্ষণ যুপকাষ্ঠের মতো জ্বলেছে।আমি চিরকাল- ই নিষ্কর্ম নির্বাক..নিষ্কর্মা বলায় ভালো…তবুও জমাট অন্ধকারে কেনো অকারণ আলো ফেলো? ফুরোয় সকাল, ফুরোয় বিকেল, শুধু পড়ে থাকে বৃষ্টিদাগ।কিছুতেই বেরোতে পারছি না।

অশ্বেতর গতি ,নির্গত বুদ্ধিকে সাকুল‍্যে টেনে এনে কবেই অর্গল দিয়েছে, বিকল্পকে ঠেসে ধরেছে, কুঁজো হয়ে খুঁড়িয়েছে,বুড়িয়েওছে বলা যায়, ইগোর দফা রফা করেছে..কিন্তু শুনছে কে..!এখনো সারারাত পাতাখসার শব্দ পাই, নিত‍্য সঙ্গোপনে.. আজও তাকিয়ে থাকি ভাদ্রের আকাশে.. নক্ষত্রের চাষ দেখি..উড়ে যাওয়া সাদা মেঘ থেকে আসরফী ঝরে পড়ে,দু-হাতে নেবো কি..! তার আগেই লুঠ হয়ে গেলো…মানুষের সোনার লোভ আর গেলো না…

নীহারিকা গুনতে পারি না, অলক কালো তে সব গুলিয়ে ফেলি..তবুও ভাবি সারা জীবন শুধু গুনহা করে গেলাম,এক মস্ত গুনেগার, উষ্ণ বায়ুর বিলাস শুধু বয়েই মরেছি।আমাকে আগুন ছুঁইও..ওতে বিষ নেই..
বিষের মঞ্জরী ফুটে আছে.. চুম্বনেও স্বস্তি নেই..শুধু অন্তর্বাস খুলে খুলে পড়ে,চারিদিকে পদ‍্য ছড়িয়ে আছে..সেখানেও অন্তর্বাসের ঘ্রাণ.. একটু শুদ্ধ চিত্ত হও..রুষ্ট কবিতার খাতা বনস্থলীতে রেখে এসো,মায়ের পায়ের কাছে বসো,যথেষ্ট হয়েছে.. এবার একটু আত্মশুদ্ধি চায়..সর্পদ্রষ্ট নিষ্প্রাণ সায়াহ্নে আত্মাশুদ্ধি চায়..তোমার নবীনমূর্তি জরার আঘাতের জন্য প্রস্তুত
রেখো।

তোমরা আবার পৃথিবীর কিশলয়ে মুখ লুকোলে নাকি ! শুধু একটা জায়গাতে বেশরম ইগো একেবারে আগাছার নীচে ছুপা রুস্তম.. চারো খানে চিৎ , যুদ্ধে না গিয়েও এত আঘাত ইহজীবনে ইষ্ট ছিলো না..চিরকালীন মধ‍্যযুগীয় লড়াই একেবারে অভিসন্ধীমূলক আস্তানা গেড়ে বসলো আমার মধ‍্যবিত্ত অলিন্দে.. কাপুরুষ তো ছিলামই, তাই স্বেচ্ছাচারী হলাম স্বযত্নে।
অথচ সারাটা জীবন, সংসারের ঘেরাটোপে-ই সাঁতার কেটে গেলাম।

কৈশোর কিন্তু ঠোঁট বাঁচিয়ে রাখার খেলা ছিলো না, মেলা বাসনা।নিষ্প্রদীপ মন্হর আলোয় বিকল্প-কে বল্ করেছো কি মরেছো…সম্বলহীন হয়ে পড়া আটকায় কে? বিকলাঙ্গতা আমার রন্ধ্রে রন্ধ্রে.. সুতরাং আমার থেকে যোজন মাইল দূরে থাকায় ভালো..মায়েরা তাই বলে, মাতৃয়ার্কি নয় মোটেই.. ড‍্যাম সিরিয়াস।ওরে যাস না,ওরে যাস না,পুড়ে মরবি যে।

সে রূপ কি আর আছে..রাতদূপুরে স্বাদু-শিশির,কৃষ্ণকলি মেঘ,হৃদয় বৃত্তান্তে তীব্র আগুন, কবেই তো গেছে,
ওসব ঝরে যাওয়া মোহর,খুঁজতে যেও না।

তোমায় একবার পাতাখসা নক্ষত্রের খামারে নিয়ে যাবো নবান্নের আগে.. বীজধান সমূলে পুঁতে দেবো ভিক্ষুকের পাকস্থলী-তে…অবশ্য রোদ্দুর রাখবো না..দোলনা ঝুলিয়ে দেবো বৃষ্টি-বসন্ত যাই হোক না কেনো.. দু-দন্ড আমার কাছে বোসো, ভয় পেয়ো না..আমার আলো তোমার মুখে এসে পড়বেই, কেটে যাবে দেয়ালপাতা অন্ধকার.. তুমি থাকবে নবান্নের খামারে, আমি তোমায় নিয়ে যাবো শুকনো নদীর উল্টো ডাঙায় যেখানে দিনের আলোয় ফ‍্যাকাশে হলো রাত..আলোর কুঁড়ি পাপড়ি মিললো সবে। পকেট ঠনঠন অথচ হাবভাব একেবারে হারুণ অল রশিদের মতো,এক মস্ত খালিফা..

আর এখন তো দেখোনি আমায়..চাকরি তে বহাল, তাই নাকি আমার বিয়ে হয়েছিলো, নাহলে আমার ঘুম কুম্ভকর্ণের চেয়েও গাঢ়,ধুম্রলোচন না হলেও কুমড়ো লোচনের মতো আমার চেহারা.. ,আমার অর্ধাঙ্গিনী বলেন, অথচ আয়নার সামনে নিজেকে বেশ ফুটফুটে টি লাগে..পেট-টা ফুটির মতো একটু গোল হলেই বা। ভাবছো ফাজলামি করছি।ফক্কুড়ী করতে গেলেও কিছু বুদ্ধি লাগে, আমার সেটুকুও নেই.. অসুখ করলেও বুঝতে পারি না..সবাই দিব‍্যি নড়াচড়া করে..এদিক ওদিক সুখের কাছে যায় এক-দু মুঠো ,যা পায়,কেনা বেচা করে,চওড়া বুকের বুক পকেটের নীচে পাখি পুষে রাখে,আমার শুধু বুকের নীচে ব‍্যথা.. সব কষ্ট গুলো বড্ড যত্নে পুষেছি..নতুন গুলো বদলে নেবো ভেবে অনেক অপেক্ষা করলাম অথচ সাতসমুদ্র নির্জনতা পার করেও অভিসন্ধিগুলো রহস্যময়-ই থেকে গেলো..গা ঢাকা দিল অনৈতিকতার কাছে।বদলানো আর হলো কই..!

বর্তমান বড্ড প্রকাশিত, উদ্ভাসিত মুখ লুকোনো যায় না, সুখ লুকানো যায়। বিচ্ছিরি দাঁত নখ বেরিয়ে পড়ে, ভাঙা অলিন্দে ইঁট কাঠ ক্রমশ সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে.. অতীত যতই ফুটিয়ে তোলো,মানবে না কেউ ,পুরুষ-টি সুন্দর ছিলো..এই সুন্দরী মানবী তার প্রেমে ছিলো,সেখানে ছিলো রোমহর্ষক টান..এসব এখন অতীত..তাই অতীতের কবুতরের স্তোত্রপাঠ..সেখানেই মুখ ডুবিয়ে দেখি কোনো ” রাঙা চিবুক, ভাঙা কলস ” ভাসলো নাকি…

আরও জটিলতা, অবয়বের আলসেতে জড়িয়ে যাবার আগেই জমিয়ে তুলি বর্ণনার পূর্ণ রোদ্দুরে, জেব্রা লাঠিতে ঢাকের কাঠিতে বোল্..পুজো মানেই সুসময়,কিশোর তরঙ্গে গড়ে তোলা একলা থাকলে কবিটা এসে জ্বালায়,ছুটির দিনে তো কথায় নেই.. পাহাড়, নদী, পৃথিবীর সব কাঁটা লতা,কেমন যেনো অন‍্যরকম হয়ে যায়।দূগ্গাদিনগুলো কেমন অন‍্যরকম, বলো..কেমন উপচে পড়া সুখ,আনন্দে একেবারে শিউরে উঠতুম।

মা খুব সহজেই বুঝেছিলেন এ বালক বকুল ফুলের সফেন পাপড়ি দিয়ে ঢাকা ছোট্টো কিশোর-টি আর নেই।
মুখচ্ছবি, অচেনা, কিছু চেনাও চিরতরে,তবুও তাঁর চোখে…

সব শেষের তারা-রা আজ ঘর বেঁধেছে, বিষন্নতার শব্দ দ্বিপ্রহরে,
আকাশ খোঁজে নির্জনতার ভোরে..
ধরে-বেঁধে নিতেও পারো তবু সে মন ঘরে আর যাবে না..
বুকের ভেতর ভাঙছে রোজ-ই,
মানবিকতা-ও যাচ্ছে এখন কেনা।

হে পলাশ বিষন্নতা ঢাকলে কেনো সাদা বকুল ফুলে…?
যত পাথর শুদ্ধ ছিলো,
রাখবো এবার তুলে।

Powered by themekiller.com