Breaking News
Home / Breaking News / পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী হচ্ছেন ড. শামসুল আলম, শপথ রোববার

পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী হচ্ছেন ড. শামসুল আলম, শপথ রোববার

ফারুক হোসেন ঃ।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী হচ্ছেন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদ্য সাবেক সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম। রোববার (১৮ জুলাই) প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন তিনি।

শামসুল আলম দীর্ঘ ১২ বছর ধরে জিইডিতে চুক্তিভিত্তিক দায়িত্ব পালন করেছেন। গত ৩০ জুন তার মেয়াদ শেষ হয়।
দেশবরেণ্য ব্যক্তিত্ব ড. শামসুল আলম
সৎ সাহসী সজ্জন নির্লোভ নিরহংকার নিবেদিতপ্রাণ দেশপ্রেমিক বঙ্গবন্ধুর জীবন-দর্শনের সারথি পরিকল্পনা কমিশনের দীর্ঘ ১২ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ও সিনিয়র সচিব, ডেলটা গভর্নিং কাউন্সিলের সচিব, মহান মুক্তিযুদ্ধের জাতীয় বীর একুশে পদকপ্রাপ্ত।

ড. শামসুল আলম জানান প্রধানমন্ত্রী আমাকে জিইডিতে যে দায়িত্ব দিয়েছিলেন সেটি আমি সূচারুভাবে পালন করেছি। এখন যে বিশ্বাস ও আস্থা রেখে নতুন দায়িত্ব দিচ্ছেন সেটিও যথাযথভাবে পালন করবো ইনশাআল্লাহ। আমার প্রধান কাজ হবে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি বৃদ্ধি করা।

শামসুল আলম পেশাগত জীবনে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৫ বছর অধ্যাপনার পর প্রেষণে ছুটিতে যান। ২০০৯ সালের ১ জুলাই পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হিসেবে যোগদান করেন।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সফল অধ্যাপক, সৎ সাহসী সজ্জন নির্লোভ নিরহংকার নিবেদিতপ্রাণ দেশপ্রেমিক বঙ্গবন্ধুর জীবন-দর্শনের সারথি পরিকল্পনা কমিশনের দীর্ঘ ১২ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন সচিব ও সিনিয়র সচিব, ডেলটা গভর্নিং কাউন্সিলের সচিব, মহান মুক্তিযুদ্ধের জাতীয় বীর একুশেপদকপ্রাপ্ত কৃষিবিদ দেশবরেণ্য ব্যক্তিত্ব ড. শামসুল আলম মোহনকে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নিযুক্ত হওয়ায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নয়া প্রতিমন্ত্রীকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও সংগঠন। বিবৃতিদাতাগণ ড. শামসুল আলমকে শিক্ষকতা, পরিকল্পনা কমিশনের সিনিয়র সচিবসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেমন সফল হয়েছেন তেমনি প্রতিমন্ত্রী হিসেবে তার উপর অর্পিত দায়িত্ব সফলভাবে পালন করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন।

ড.শামসুল আলম ১৯৫১ সালের ১ জানুায়রি চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বর্তমান বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে ১৯৬৫ সালে কৃষি অর্থনীতিতে স্নাতক ও ১৯৭৩ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৮৩ সালে ব্যাংককের থাম্মাসাট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ও ১৯৯১ সালে ইংল্যান্ডের নিউ ক্যাসেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একই বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।

শামসুল কর্মজীবনে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৭৪ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত অধ্যাপনা করেন। তিনি ৪ বছর তিন মাস জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচীতে ২০০২ থেকে ডিসেম্বর ২০০৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশি কনসালটেন্ট হিসেবে কাজ করেন। ২০০৮ সালে তিনি জার্মানির হুমবোল্ট বিশ্ববিদ্যালয়, বেলজিয়ামের ঘেণ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং অধ্যাপক এবং নেদারল্যান্ডের ওয়াগিনেঞ্জেন ইউনিভার্সিটি অ্যান্ড রিচার্সে ইরসমাস মুন্ডুস স্কলার হিসেবে কাজ করেন। এছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্যাকাল্টি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

২০০৯ সালের ১ জুলাই প্রেষণ ছুটিতে সরকার তাকে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হিসেবে নিয়োগ প্রদান করে। ২০১৫ সালে কমিশনের সদস্য থাকাবস্থায় তাকে জ্যেষ্ঠ সচিব করা হয়। ২০১৬ সালে অধ্যাপনা থেকে অবসর গ্রহণ করেন। কমিশন সদস্য হিসেবে তার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর কয়েকবার তার মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ২০ জুন পুনরায় সরকার তাকে তিন বছরের জন্য নিয়োগ প্রদান করে। শামসুল আলম ৩০ জুন ২০২১ সাল সিনিয়র সচিব থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ১৬ জুলাই ২০২১ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের বরাতে শামসুল আলমকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগের ব্যাপারে ঘোষণা দেয়া হয।

পরিকল্পনা কমিশনে দায়িত্ব পালনের সময় তিনি ‘বাংলাদেশের প্রথম প্রেক্ষিত পরিকল্পনা’ (২০১০-২০২১) ও ‘ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা’ (২০১১-২০১৫) প্রণয়ন করেন। তিনি ‘বাংলাদেশ টেকসই উন্নয়ন কৌশলপত্র’ (২০১১-২০২১) ও ‘সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্র’ (২০১৫-২০২৫) নীতিমালা প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি বাংলাদেশে সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জন বিষয়ক বেশ কিছু প্রতিবেদন, অধ্যয়ন ও গবষণা গ্রন্থ সরাসরি তত্ত্বাবধান ও সম্পাদনা করেন।

শামসুল অর্থনীতি বিষয়ক ১২টি গ্রন্থ রচনা করেন যার মধ্যে গবেষণা ও পাঠ্যপুস্তক অন্তর্ভুক্ত। এছাড়ও তিনি ১৮টি গ্রন্থ সম্পাদনা করেন ও তার ৪৮টি গবেষণা প্রতিবেদন বিভিন্ন সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।

২০১৮ সালে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ইকনোমিক মডেলিং তাকে ইকনোমিস্ট অব ইনফ্লুয়েন্স পুরস্কারে ভূষিত করে। এছাড়াও একই বছর তিনি বাংলাদেশ কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতি স্বর্ণপদক, বাংলাদেশ শিক্ষা পর্যবেক্ষণ সোসাইটি কর্তৃক ‘নজরুল ইসলাম স্মৃতি পদক’ লাভ করেন। ২০২০ সালে অর্থনীতিতে বিশেষ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার একুশে পদক প্রদান করে।

ড. আলম বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী কমিটি সিন্ডিকেটে সম্মানিত সিন্ডিকেট সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সিন্ডিকেটের সম্মানিত সদস্য হিসেবে এবং শিক্ষক নির্বাচনী কমিটির বিশেষজ্ঞ সদস্য হিসাবে নিয়োজিত রয়েছেন।

ইউএনডিপি বাংলাদেশে ১৪ মাস সিনিয়র স্কেলে পূর্ণকালীন জাতীয় কনসালটেন্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তিনি জাতীয় দৈনিকসমূহে উপ-সম্পাদকীয় পৃষ্ঠায় গত তিন দশকের অধিক সময় ধরে আর্থ-সামাজিক,রাজনৈতিক বিষয়ে বিশ্লেষণধর্মী অসংখ্য কলাম লিখেছেন ও এখনও লিখে যাচ্ছেন।

ছাত্র জীবনে ড. আলম একজন নর্ম, ভদ্র, স্বল্পভাষী এবং অত্যন্ত মেধাবী ও বিচক্ষণ ব্যাক্তিত্ব হিসেবে সকলের মাঝে সমাদৃত ছিলেন। সাহিত ̈, সংস্কৃতি, রাজনীতি এবং সাংবাদিকতা সকল ক্ষেত্রেই ছাত্র জীবনে তাঁর বিচরণ ছিল স্মরণীয়। ড. আলম ১৯৬৬-১৯৬৭ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (বাকসু)‘এর সাহিত্য সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হয়ে “মঞ্জরী” নামে একটি সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রজীবনেই সে সময়ের বৃহত্তর ময়মনসিংহের প্রথম জনপ্রিয় পত্রিকা ‘দৈনিক জাহান’ ও ‘বাংলার দর্পণ এর একজন একনিষ্ঠ সাংবাদিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পাশাপাশি দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি এবং সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সম্পর্কিত বিষয়ে প্রতিনিয়ত কলাম লিখে চলেছেন।

ড. আলমের পারিবারিক জীবনে স্ত্রী, দুই পুত্র সন্তান, ও এক নাতনী রয়েছে।

Powered by themekiller.com