অনলাইন ডেস্ক : নারীদের জিম্মি করে দেহব্যবসায় বাধ্য করানোর অভিযোগে প্রথমবারের মতো কক্সবাজার শহরের পাঁচতারা ও মেঘালয় আবাসিক নামে দুই হোটেল মালিকের বিরুদ্ধে মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলা করেছে পুলিশ।
কক্সবাজার সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রাজীব চন্দ্র পোদ্দার বাদী হয়ে দায়ের করা মামলায় ১২ নারীসহ আরো ১৭ জনকে আসামী করা হয়েছে। ২৬ সেপ্টেম্বর রাতে নথিভূক্ত হওয়া মামলায় (নম্বর-১০৩/২০১৮) অভিযুক্ত ১৭ জনকে কারাগারে নেয়া হলেও হোটেল মালিক দু’জন পলাতক রয়েছে।
আটককৃতরা হলেন, কুমিল্লার দেবিদ্বার ধামতলীর শামসুল হক চৌধুরীর ছেলে আলাউদ্দিন চৌধুরী, কক্সবাজারের রামুর শ্রীমুরার মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে নুরুল আজিম, কুমিল্লার দাউদকান্দির বেকিনগর এলাকার মৃত রুস্তম আলী বেপারির ছেলে আবু সাহিদ, গাজিপুরের পুবাইল এলাকার আলি আকবরের ছেলে মোহাম্মদ আতিক, চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার সালাহউদ্দিন, মহেশখালীর নদী, রামুর সুমি, আমিনা, বাঁশখালীর লিজা, লক্ষীপুরের মায়া, ধানমন্ডির সাবিনা, চাঁদপুরের স্বপ্না, বান্দরবানের মিনু, কুমিল্লার রায়পুরের রাবেয়া, টেকনাফের ইয়াসমিন, গাজীপুরের তন্নি ও রাজশাহীর লিমা।
মামলায় পলাতক আসামীরা হলেন, কক্সবাজার শহরের লালদিঘীর দক্ষিণপাড়ের পাঁচতারা হোটেলের মালিক ও জাসদের সহযোগী সংগঠন যুবজোট কেন্দ্রীয় কমিটির ত্রাণ ও পূনর্বাসন সম্পাদক এবং কক্সবাজার জেলা সভাপতি রমজান আলী সিকদার ও কলাতলী কটেজ জোনের মেঘালয় আবাসিক হোটেলের ভাড়াটিয়া মালিক কক্সবাজার পৌরসভার লাইট হাউসপাড়ার ইউসুফ।
মামলার অার্জিতে উল্লেখ করা হয়েছে, অপরাধ দমনে শহরে নিয়মিত বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে। এরই জের ধরে ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে সদর থানার পৃথক কয়েকটা টিম শহরে অভিযানে নামে। দীর্ঘদিন ধরে পতিতাবৃত্তির অভিযোগ থাকা লালদিঘীর পাড়ের পাঁচতারা হোটেল ও কলাতলীর কটেজ জোনের মেঘালয় হোটেলে নারী মজুদের খবর পায় পুলিশ।
প্রথমে হোটেল পাঁচতারায় অভিযান চালিয়ে ৬ নারী ও ২ পুরুষকে আটক করা হয়। এসময় ২০০ কনডমও জব্দ করে অভিযানকারিরা। অপরদিকে, মেঘালয় হোটেলে অভিযান চালিয়ে ৭ নারী ও ৩ পুরুষকে আটক করে পুলিশ। সেখান থেকে জব্দ করা হয় ৪১০ পিস কনডম।
আরো উল্লেখ করা হয়, পলাতক আসামী রজমান আলী সিকদার তার মালিকানাধীন পাঁচ তারা হোটেলটি মিনি পতিতালয় বানিয়ে নারী মজুদ রেখে অবাধে পতিতাবৃত্তি চালিয়ে আসছে। একই ভাবে ঢাকা, কুমিল্লা ও রামুর কয়েকজনের সহযোগিতায় কলাতলীর মেঘালয় হোটেলকেও মিনি পতিতালয় বানিয়েছে ভাড়াটিয়া ইউসূফ। তাদের বিরুদ্ধে মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনের ২০১২ এর ১২/১৩ ধারার অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার বাদি এসআই রাজীব চন্দ্র পোদ্দার বলেন, অভিযান কালে দেখা গেছে পাঁচতারা হোটেলটি আদালতপাড়ার লাগোয়া। হোটেলটির পূর্বকিনার ঘেঁষে করা চলাচল পথে ডজনাধিক ভাড়া দোকান রয়েছে। মাঝখানেই হোটেলটির প্রবেশ পথ। হোটেলের অফিসের টয়লেটের ভেতর বাড়ির সাথে একটি গোপন পথ পাওয়া গেছে। বাড়িতেই নারী মজুদ রেখে গোপন পথ দিয়েই খদ্দেরের কাছে সাপ্লাই করা হয় বলে প্রমাণ মিলেছে। এটা ছাড়াও আরো কয়েকটি গোপন পথ রয়েছে বলে খবর পেয়েছি।
মামলাটি সম্পর্কে কক্সবাজার জেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বলেন, রমজান সিকদারের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো পুরোনো। এটি তাদের পরিবারের পুরোনো ব্যবসা। অপরাধ আড়াল করতেই জেলা জাসদে যোগ দিয়েছিল রমজান। তার কারণে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হওয়ায় তাকে জাসদ থেকে বহিস্কার করা হয়। এরপর যুবজোটের কমিটি এনে অপকর্ম অব্যাহত রেখেছে। সাম্প্রতিক মামলার বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। এটি আমাদের জন্য বিব্রতকর। ডকুমেন্টগুলো একত্র করে ঢাকায় পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে পাঁচতারা হোটেলের মালিক রমজান আলী সিকদারের মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
তবে, জেলা যুবজোটের সাধারণ সম্পাদক অজিত কুমার হিমু প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মামলাটি ষড়যন্ত্রমূলক উল্লেখ করে তা প্রত্যাহারের দাবি করা হয়েছে।