বিশেষ প্রতিনিধিঃ
কল্যাণমুখী নীতিমালার দাবি বিশেষজ্ঞদের * প্রতিদিনই বাড়ছে ছিন্নমূল
সাধারণ শিশুর মতো ওরা নয়। মায়ের স্নেহ, বাবার আদর ওদের ভাগ্যে কমই জোটে। কেউ হয়তো জন্মের পরই দেখেনি বাবাকে। একটু বুঝে ওঠার পর থেকে মায়ের সঙ্গে বেরিয়ে পড়ে জীবিকার খোঁজে।
আরেকটু বড় হলে মা এক পথে, ওরা অন্য পথে ঘুরতে থাকে পেটের দায়ে। এভাবে জীবন তাদেরকে দাঁড় করিয়ে দেয় এক নির্মম বাস্তবতার মুখোমুখি। এরা ছিন্নমূল শিশু।
গেণ্ডারিয়া রেলস্টেশনের পাশে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ৪ শিশু। ওদের বয়স ৮ থেকে ১২ বছরের মধ্যে। ওদের এক হাতে ভাঙারির বস্তা, অন্য হাতে পলিথিন। ওরা কী যেন ভাগাভাগি করতে ব্যস্ত।
এ চারজনের একজন সর্দারের ভূমিকা নিয়ে একেকজনের পলিথিনে ঢেলে দিচ্ছে সেই উপকরণ। কাছে গিয়ে নিশ্চিত হলাম, এরা জুতার আঠা ড্যান্ডি ভাগাভাগি করছে শুঁকার জন্য।
জানা গেল এদের নাম আলিফ, মানিক, রাসেল ও কালু। এ চারজনই রাতে যাত্রাবাড়ি ফ্লাইওভারের নিচে ঘুমোয়। দিনে এরা ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় বোতল, প্লাস্টিকের টুকরো, ভাঙারি সংগ্রহ ও বিক্রি করে।
ক্ষুধা মেটাতে ড্যান্ডিতে আসক্ত হয়ে পড়েছে ওই চার পথশিশুই। ঢাকায় আলিফ, কালুর মতো অনেক পথশিশু রয়েছে। তার সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান নেই সরকারের হাতে।
পথশিশুরা শিক্ষা, স্বাস্থ্য পুষ্টিসহ নানা সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এদের নেই নির্দিষ্ট কোনো ঠিকানা। খোলা আকাশ, পার্ক, ফুটপাত, রেলস্টেশন, ফেরিঘাট-লঞ্চ টার্মিনাল কিংবা বাস স্টেশনেই এদের থাকার জায়গা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ আদমশুমারিতে ভাসমান মানুষ সম্পর্কে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা যায়, দেশে চার লাখের মতো পথশিশু রয়েছে। যার অর্ধেকই অবস্থান করছে রাজধানী ঢাকায়।
অন্যদিকে জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফ বলছে, বাংলাদেশে পথশিশুর সংখ্যা ১০ লাখের বেশি। ঢাকার হিসাব অবশ্য তাদের কাছে নেই। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুধু ঢাকাতেই ছয় লাখ পথশিশু রয়েছে।
সারা দেশে পথশিশুর সংখ্যা ১০ লাখেরও বেশি। পথশিশুরা ক্ষুধার জ্বালা, একাকিত্বের কষ্ট বা সঙ্গ দোষে নানা ধরনের মাদক নিচ্ছে। এমন এক মাদক ড্যান্ডি। ড্যান্ডি সেবনের বিষয়ে জুরাইনবস্তির পথশিশু মৃদুল বলে, ‘ক্ষুধা লাগে। ড্যান্ডি খেলে ঝিমুনি আসে, ঘুম আসে।
তখন ক্ষুধার কথা মনে থাকে না। বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের তথ্যমতে, পথশিশুদের ৮৫ শতাংশই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মাদকে আসক্ত। সংগঠনটির তথ্যানুযায়ী ঢাকা শহরে কমপক্ষে ২২৯টি স্পট রয়েছে, যেখানে ৯ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিশুরা মাদক সেবন করে। পথশিশুরা সাধারণত গাঁজা, ড্যান্ডি, পলিথিনের মধ্যে গামবেল্ডিং দিয়ে ও পেট্রল শুঁকে নেশা করে।
পথশিশুদের বাস্তব অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে ২০১৬ সালে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সোশ্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক এনহ্যান্সমেন্ট প্রোগ্রাম (সিপ)। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, পথশিশুদের প্রায় ৪৪ শতাংশ মাদকাসক্ত, ৪১ শতাংশ শিশুর ঘুমানোর কোনো বিছানা নেই, ৪০ শতাংশ শিশু প্রতিদিন গোসলহীন থাকে, ৩৫ শতাংশ খোলা জায়গায় মলত্যাগ করে, ৫৪ শতাংশ অসুস্থ হলে দেখার কেউ নেই ও ৭৫ শতাংশ শিশু অসুস্থতায় ডাক্তারের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ করতে পারে না।
এসব শিশুদের কল্যাণে নেই কোনো নীতিমালা। সরকার ঘোষিত ভিশন ২০৪১ অর্জন করতে হলে এখনই এসব শিশুদের কল্যাণে একটি পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা তৈরি প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। গুলিস্তান পার্কে কথা হয় পথশিশু সুমাইয়ার সঙ্গে।
সাধারণ শিশুর মতো ওরা নয়। মায়ের স্নেহ, বাবার আদর ওদের ভাগ্যে কমই জোটে। কেউ হয়তো জন্মের পরই দেখেনি বাবাকে। একটু বুঝে ওঠার পর থেকে মায়ের সঙ্গে বেরিয়ে পড়ে জীবিকার খোঁজে।
আরেকটু বড় হলে মা এক পথে, ওরা অন্য পথে ঘুরতে থাকে পেটের দায়ে। এভাবে জীবন তাদেরকে দাঁড় করিয়ে দেয় এক নির্মম বাস্তবতার মুখোমুখি। এরা ছিন্নমূল শিশু।
গেণ্ডারিয়া রেলস্টেশনের পাশে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ৪ শিশু। ওদের বয়স ৮ থেকে ১২ বছরের মধ্যে। ওদের এক হাতে ভাঙারির বস্তা, অন্য হাতে পলিথিন। ওরা কী যেন ভাগাভাগি করতে ব্যস্ত।
এ চারজনের একজন সর্দারের ভূমিকা নিয়ে একেকজনের পলিথিনে ঢেলে দিচ্ছে সেই উপকরণ। কাছে গিয়ে নিশ্চিত হলাম, এরা জুতার আঠা ড্যান্ডি ভাগাভাগি করছে শুঁকার জন্য।
জানা গেল এদের নাম আলিফ, মানিক, রাসেল ও কালু। এ চারজনই রাতে যাত্রাবাড়ি ফ্লাইওভারের নিচে ঘুমোয়। দিনে এরা ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় বোতল, প্লাস্টিকের টুকরো, ভাঙারি সংগ্রহ ও বিক্রি করে।
ক্ষুধা মেটাতে ড্যান্ডিতে আসক্ত হয়ে পড়েছে ওই চার পথশিশুই। ঢাকায় আলিফ, কালুর মতো অনেক পথশিশু রয়েছে। তার সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান নেই সরকারের হাতে।
পথশিশুরা শিক্ষা, স্বাস্থ্য পুষ্টিসহ নানা সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এদের নেই নির্দিষ্ট কোনো ঠিকানা। খোলা আকাশ, পার্ক, ফুটপাত, রেলস্টেশন, ফেরিঘাট-লঞ্চ টার্মিনাল কিংবা বাস স্টেশনেই এদের থাকার জায়গা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ আদমশুমারিতে ভাসমান মানুষ সম্পর্কে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা যায়, দেশে চার লাখের মতো পথশিশু রয়েছে। যার অর্ধেকই অবস্থান করছে রাজধানী ঢাকায়।
অন্যদিকে জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফ বলছে, বাংলাদেশে পথশিশুর সংখ্যা ১০ লাখের বেশি। ঢাকার হিসাব অবশ্য তাদের কাছে নেই। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুধু ঢাকাতেই ছয় লাখ পথশিশু রয়েছে।
সারা দেশে পথশিশুর সংখ্যা ১০ লাখেরও বেশি। পথশিশুরা ক্ষুধার জ্বালা, একাকিত্বের কষ্ট বা সঙ্গ দোষে নানা ধরনের মাদক নিচ্ছে। এমন এক মাদক ড্যান্ডি। ড্যান্ডি সেবনের বিষয়ে জুরাইনবস্তির পথশিশু মৃদুল বলে, ‘ক্ষুধা লাগে। ড্যান্ডি খেলে ঝিমুনি আসে, ঘুম আসে।
তখন ক্ষুধার কথা মনে থাকে না। বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের তথ্যমতে, পথশিশুদের ৮৫ শতাংশই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মাদকে আসক্ত। সংগঠনটির তথ্যানুযায়ী ঢাকা শহরে কমপক্ষে ২২৯টি স্পট রয়েছে, যেখানে ৯ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিশুরা মাদক সেবন করে। পথশিশুরা সাধারণত গাঁজা, ড্যান্ডি, পলিথিনের মধ্যে গামবেল্ডিং দিয়ে ও পেট্রল শুঁকে নেশা করে।
পথশিশুদের বাস্তব অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে ২০১৬ সালে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সোশ্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক এনহ্যান্সমেন্ট প্রোগ্রাম (সিপ)। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, পথশিশুদের প্রায় ৪৪ শতাংশ মাদকাসক্ত, ৪১ শতাংশ শিশুর ঘুমানোর কোনো বিছানা নেই, ৪০ শতাংশ শিশু প্রতিদিন গোসলহীন থাকে, ৩৫ শতাংশ খোলা জায়গায় মলত্যাগ করে, ৫৪ শতাংশ অসুস্থ হলে দেখার কেউ নেই ও ৭৫ শতাংশ শিশু অসুস্থতায় ডাক্তারের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ করতে পারে না।
এসব শিশুদের কল্যাণে নেই কোনো নীতিমালা। সরকার ঘোষিত ভিশন ২০৪১ অর্জন করতে হলে এখনই এসব শিশুদের কল্যাণে একটি পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা তৈরি প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। গুলিস্তান পার্কে কথা হয় পথশিশু সুমাইয়ার সঙ্গে।
সৎমায়ের নির্যাতনে বাড়ি ছাড়ে বছরচারেক আগে। এখন তার বয়স ১৪ বছর। সে জানায়, এ পার্কেই এক ভ্রাম্যমাণ নারীর সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সেই নারী সুরাইয়াকে বাসায় নিয়ে যায়। অন্য পুরুষদের থেকে টাকা নিয়ে তাদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করতে বাধ্য করে তাকে।
একাধিক বেসরকারি শিশু সেবা কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পথশিশুদের উন্নয়নে তারা নানা কর্মসূচি পালন করে থাকে। তারা জানায়, অধিকাংশ শিশুই যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে তাদের কাছে আসে।
বেশিরভাগ সময় তারাই যায় শিশুদের দোরগোড়ায়। ছেলেদের তুলনায় মেয়ে শিশুরা বেশি ভিকটিম। তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তারেক হাসান নামে একজন সেবাকর্মী বলেন, এসব শিশুর শিক্ষার অধিকার নেই।
স্বাভাবিক জীবনযাপনে মেলামেশার অধিকার নেই। ফলে এরা অপরাধ করতে কুণ্ঠাবোধ করে না। সহজে কাউকে বিশ্বাস করতে চায় না। ধ্বংসাত্মক কাজে আগ্রহী ও নেতিবাচক আচরণে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে।
মানবাধিকার কর্মী রোকসানা কবির বলেন, পথশিশুদের পুনর্বাসন এবং তাদের অধিকার আদায়ের জন্য সরকারি-বেসরকারি অনেক সংস্থা ও সংগঠন রয়েছে। কিন্তু কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ ও ফলাফল চোখে পড়ে না।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রতিদিনই এ ধরনের ছিন্নমূল শিশুর সংখ্যা বেড়েই চলছে, যা রীতিমতো উদ্বেগজনক।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিশুদের কল্যাণে ১৯৭৪ সালের ২২ জুন জাতীয় শিশু আইন (চিলড্রেন অ্যাক্ট) করেছিলেন। যার মাধ্যমে শিশুদের নাম ও জাতীয়তার অধিকারের স্বীকৃতি আদায়, সব ধরনের অবহেলা, শোষণ, নিষ্ঠুরতা ও খারাপ কাজে ব্যবহার হওয়া ইত্যাদি থেকে নিরাপত্তার অধিকার নিশ্চিত করা যায়। বর্তমান সরকার শিশুবান্ধব নানা কর্মসূচি ও প্রকল্প হাতে নিয়েছে। যদিও তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল।