Breaking News
Home / Breaking News / দুই বাংলার বৃহত্তম নেটওয়ার্ক দৈনিক শব্দনগরের আজকের সেরা ছয় সাহিত্য

দুই বাংলার বৃহত্তম নেটওয়ার্ক দৈনিক শব্দনগরের আজকের সেরা ছয় সাহিত্য

আগের ছাত্র পরের ছাত্র
*
মহিউদ্দিন সুমন
*
আগের কালে স্যার দেখিলে
মাথা করতাম নিচু,
নিচু মাথায় সালাম দিয়া
কইতাম না আর কিছু।

চোখে চোখে তাকাই নি গো
যদি কিছু বলে,
স্যারের পিছে হাঁটছি কত
বন্ধুরা এক দলে।

স্যারকে যখন দেখছি চোখে
আসতে আছে হেটে,
উঁচু গলা উঁচু দেহ
রাখছি ছোট বটে।

এহন দেহি ছোটো দেহ
বড় গলায় বলে,
আমার বাবা ভাইয়ের কথায়
পাঠ্যশালাটি চলে।

চোখ রাঙিয়ে বলে কথা
গাঢ় করিয়া উচু,
দলের গরম টাকার গরম
ভাবে সবাই নিচু।

আঙুল তুলে শাসায় ওরা
ভুলে যায় সে স্যার,
একা পাইলে শোধ নিবে সে
মন চাইলে কয় মা-র।

এই যদি হয় মূলনীতি তার
পাস করে সে তবে,
এমন ছাত্র পাস করিয়া
কাজে লাগবে কবে।
——————————————

বাঁচার মরণ
চৈতন্য কুমার বর্মণ
০২/১২/২০২২
*******************************************************
গোরাচাঁদ তার স্ত্রীকে নিয়ে হাঁটছে। ঠিক হাঁটা বলা চলে না, কিছুটা দৌড়োনোর ভঙ্গিতে। পিছুপিছু দুই সন্তান,চন্ডী আর দুর্গা। গোরাচাঁদের মাথায় ঘর-সংসারের যাবতীয় জিনিষের বাক্সো। চণ্ডী আর দুর্গা যদিওবা একটু-আধটু হাঁটছে, স্ত্রী মোটেও হাঁটতে পারছে না। গোরাচাঁদ গরুখ্যাদানোর মতো তাদের তাড়িয়ে নিয়ে চলেছে।
গোরাচাঁদ একটু-আধটু জলস্রোত দেখেছে। কখনো-সখনো বয়ষ্কদের কাছ থেকে বড়বড় নদীর ভয়ঙ্কর জলস্রোতের কথা শুনে চমকেও উঠেছে। কিন্তু আজ ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটে চলা এই জনস্রোতের কাছে জলস্রোত কিচ্ছুই বলে মনে হচ্ছে না তার। মাঝে-মধ্যে ওর স্ত্রী কেঁদে কেঁদে উঠছে। গোরাচাঁদ বেশ রাগীস্বভাবের। চোখপাকিয়ে তাকে বেশ জোরেশোরেই বকা দেয়। অন্যদিকে দুর্গা আর একটুও হাঁটতে চাইছে না। সে মায়ের হাত ছেড়ে দিয়ে ভ্যাঁভ্যাঁ করে কেঁদেই চলেছে।
তীব্র এই জনস্রোতে কে কার দিকে তাকায়। পাছে গুলিগোল্লার ভয়। সকলের চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ। যেখানে-সেখানে মরা, আধামরা মানুষের দেহ। তাতে কারো ভ্রূক্ষেপ নেই। লক্ষ্য সীমান্ত পার হওয়া।

দুর্গার ওপর ভীষণ চটে গেল গোরাচাঁদ। রাগতস্বরে বলল, এই দ্যাখ, কানবি তো আছাড়ায়ে মারে ফ্যালাবো—হাঁট্।
দুর্গা আরও জোরেসোরে কান্না শুরু করে দিলো।
—একি, চন্ডী গেল কনে।এই শুনতিছিস, আমাগের চণ্ডী কই ?
চন্ডী ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে গেছে।
গোরার স্ত্রী মুখ ঘুরিয়ে তাকিয়ে চন্ডীকে না দেখতে পেয়ে চেঁচিয়ে ওঠে, এই যে, চন্ডী কই ? চন্ডী—
উত্তাল জনস্রোত এগিয়ে চলেছে সামনের দিকে। এরাও লোকের ধাক্কা খেতে খেতে যে জায়গায় ছিল সে জায়গায় আর নেই।গোরাচাঁদের স্ত্রী ধপাস করে মাটিতে বসে পড়ে।তার মাথার ঘোমটা খসে চুলগুলো বুকে-পিঠে মিলিয়ে যায়।গগণবিদারী সে চীৎকারে গোরাচাঁদ তার মাথার বাক্সো ফেলে দেয় মাটিতে।দুর্গা বিকট সুরে কাঁদতে থাকে।
হঠাৎ ভয়ঙ্কর একটা গুলির আওয়াজে কেঁপে ওঠে চারিদিক। তীব্র জনস্রোত আরও তীব্রতর হয়ে সকলেই দিগ্বিদিক ছুটছে।গোরাচাঁদ বাক্সোটি মাথায় নিয়ে দুর্গার হাত ধরেছে ।
—এই বউ, দৌড়ো—
—না, চন্ডীকে না নিয়ে আমি যাব না। আমার চন্ডীরে আনে দেও।
ওদের কারো পা আর সরতে চাইছে না।যেন খানিকটা ঝিমিয়ে আসে। তবু উত্তাল জনতা তো আর থামবে না। যার শরীরে যতটুকু শক্তি আছে, সেই শক্তি দিয়েই তারা ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটছে।গোরাচাঁদের হাত থেকে ছিটকে পড়ে দুর্গা। সেও চোখের পলকে জনস্রোতে মিলিয়ে যায়।
গুলির আওয়াজের থেকেও বড় আওয়াজ বেরিয়ে আসে গোরাচাঁদের স্ত্রীর দুঠোঁট থেকে। ওগো, দুগ্গাও যে হারায়ে গেল।মা দুগ্গা —মা চন্ডী, তোরা কনে গেলি রে।
দেখতে দেখতে উত্তাল জনস্রোতে ভাটা পড়ল।
শূন্য আকাশের তলে সন্তানহারা বাবা-মার অঝোর কান্নায় বাতাস হয়ে উঠল ভারী। শুধু গোরাচাঁদের একটা কথাই স্পষ্ট বোঝা গেল, চল্‌ বউ, এই গাঙের জলে ঝাপ দিয়ে আমরা মরি।
কয়েকজন লোক দ্রুত ছুটে আসছে এই দিকে। ওদের সকলের হাতে দা-বল্লম।
গোরাচাঁদ বাক্সোটি মাথায় তুলে স্ত্রীর হাত ধরে। বলে, আমার পাছ পাছ দৌড়ো বউ।
চোখের পলকে লোকগুলো ঘিরে ধরে ওদের ।
একজন বলে, এই শালা, বাক্সো দে।
আর একজন বলে, এই বল্লম দিয়ে তোর জান কবজ কর্‌বো।
গোরাচাঁদ বাক্সো ফেলে লাফ দেয় নদীতে। ছোটবেলা থেকে সাঁতারে বেশ পটু সে । জলে দম ধরেও থাকতে পারে খানিকক্ষণ। সে দম ধরে জলের তলের মাটিতে হাত রেখে সোঁসোঁ করে সামনে এগোতে থাকে।তবে সে জলে লাফ দিতেই একজন ওর দিকে বল্লম তাক করে মেরেছিল। কিন্তু গায়ে লাগেনি।
ওদের একজন গোরাচাঁদের স্ত্রীকেও জাপটে ধরে। গোরাচাঁদের স্ত্রী নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে কয়েকবার ব্যর্থ চেষ্টা করে শেষে নিস্তেজ হয়ে পড়ে।
ওরা ওকে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যেতে যেতে বলে, খাসা মাল, চল্ ক্যাম্পে নিয়ে যাই।
গোরাচাঁদ কিছুদূর গিয়ে পট-কচুড়ির মধ্যে আলতো মাথা তুলে দেখতে পায়, ওর স্ত্রীকে ওরা টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে।
গোরাচাঁদের নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে যাচ্ছে ওর চোখ দুটো।
কি জানি, গোরাচাঁদের সেই মরণঘুম কখনো ভেঙেছিল কি-না ।।
৫ আশ্বিন, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ।
——————————————
শিরোনামঃ কেন ফুল হলাম না
কলমেঃনাকিবা মৌরী
তারিখঃ০২/১২/২০২২

অবচেতন মনে প্রশ্নগুলি উঁকি দেয় বারবার
আচ্ছা কে উত্তম ? কার সৌন্দর্য বেশি ?
ফুল নাকি মানুষের ?
আমি মানুষ, কোথায় আমার শ্রেষ্টত্ব ?
আমি মহান, আমি উদার, আমি গুণী,
আমি জ্ঞানী আমি ক্ষমতাবান ও শক্তিশালী,
আমি বিপুল বৈভবের অধিকারী, আমি সুন্দর।
আসলেই কি তাই ?
নিজের বলতে কি কিছু আছে মানুষের ?
আমি নিজেও কি আমার ?
যিনি করছেন সকলি দান, ভুলে যাই বেমালুম।

আমি কি পারি মানবতার শিকলে আবদ্ধ হতে ?
আমি কি পারি হিংসা ভুলে প্রতিশোধের আগুন নিভিয়ে অন্যকে ক্ষমা করতে ?
আমি কি পারি নিজের ক্রোধকে সংযত রাখতে ?
বেঁচে আছি মানবতার প্রতিবন্ধক হয়ে।
আর ঐ যে স্রষ্টার সৃষ্টি ক্ষুদ্রফুল যে নিজেকে বিলিয়ে দেয় নিঃস্বার্থভাবে !
শুধু স্রষ্টার প্রতি নিজের জন্ম নেওয়ার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে।

আমি মানুষ কারো একটুখানি চাওয়া-পাওয়ায
তুলে দিই পাহাড় সমান অজুহাত।
পোকায় কাটা কুঁড়িটাও চেষ্টায় ত্রুটি রাখে না প্রস্ফুটিত হওয়ার জন্য।
ঝরে পড়ার আগমুহূর্ত পর্যন্ত নিজের সুগন্ধ ছড়িয়ে যায়
বিনিময়ে কোনো বাহ্বা চায় না।
আমি মানুষ কেন পারিনা ?
মনুষ্যত্বকে বাঁচিয়ে রাখতে কেন পারি না?
পারিনা সত্যিকারের মানুষ হতে।

ক্রোধ দুঃখ-কষ্ট, হিংসা,অহংকার, লোভ-লালসা স্বার্থপরতাকে শব্দের মতো মহাশূন্যে মিলিয়ে দিয়ে
কেন পারিনা অসুন্দরকে সুন্দর করতে ,
সর্বনির্যাতন থেকে মুক্তি করতেই তো মানুষের জন্ম।
সৃষ্টির সেরা জীব হয়ে জন্ম নিলাম ধরণীর পরে
হয়েছি কি সত্যিকারের মানুষ ?
শুধু আকৃতিতে মানবের রূপটি পেয়েছি।

তারচেয়ে ফুল হয়ে জন্ম নিলে ভালো হতো।
ইচ্ছা-অনিচ্ছায় বিলিয়ে দিতাম সৌন্দর্য সৃষ্টিকর্তার ইশারায়,
কখনো কখনো প্রিয় মানুষের উপহার হতাম,
মালা হয়ে জড়াতাম কারো কারো গলায়।
পুজোর থালায়ও হয়তো স্থান পেতাম ঠাকুরের পায়ে।

হতাম যদি নয়ন তারা
মাস-দিন,ঋতুর অপেক্ষা কিংবা সকালে বিকাল অথবা
সন্ধ্যা সময়ের নেই কোনো নির্দিষ্টতা,
সারা বছর যখন তখন ফুটে উঠতাম।
আমাকে দেখে জুড়াতো প্রাণ নাম না জানা কতজন,
দৃষ্টি কেড়ে নিতাম আমার সৌন্দর্যে,
সুবাস ছড়িয়ে হয়তো আকৃষ্ট করতাম না,
হয়তো রোগ মুক্তির জন্য কত মানুষই আমাকে ব্যবহার করতো।
হতাম ঔষধি, হিংসা অহংকারের প্রতিদানে,
কোনো প্রাপ্তির অবকাশ থাকতো না,
পরজন্মে যেন জন্মাই ঐ নয়ন তারা ফুল হয়েই।
—————————————–

অপ্রিয় হলেও সত্য
রাজন দেবনাথ ______✍️
তারিখ :০২/১১/২২ইং

অপ্রিয় হলেও সত্য কিছু উড়ন্ত ইচ্ছে
ভাসমান স্বপ্ন আর রঙিন শখ গুলো
কখনো কখনো তোমার হৃৎপিণ্ডে
জমাট বাঁধতে বাঁধতে কোনো এক
সময় নিকষ কালো রঙের দাগ পড়ে
যাবে নিজের চিন্তা চেতনার অজান্তেই!
শত সহস্র চেষ্টা করলেও পড়ে যাওয়া
দাগগুলো মুছে ফেলা দুষ্কর হয়ে উঠবে
যা শুধুই প্রতিনিয়ত মিছামিছি ভাবতে
উৎসাহিত করবে বারেবার একপর্যায়ে

সাধ আছে সাধ্য নে-ই এইটুকুই হবে
সীমাহীন তৃপ্ততার রস খোঁজে পাওয়ার
উৎস মাত্র। আর এই ইচ্ছে স্বপ্ন ও শখ
নামের তিনটি শব্দ জুড়ে বর্ণিল অনুভূতি
গুলো রাত জাগা তারার বেশে জোছনার
আলোয় আলপনা এঁকে দেবে আপন মনের
উষ্ণ আবেগে! দমকা হাওয়ায় দোল খাবে
ক্ষণে ক্ষণে আলপনার ভাঁজে ভাঁজে নিকষ
কালো রঙে মোড়ানো ইচ্ছে স্বপ্ন আর শখ
গুলো, শুধুই অশ্রু ঝরা নয়ন দু’টি অপলকে
তাকিয়ে রবে কিছুই করতে পারবে না মনে
হবে জন্মটাই যেনো আজন্ম পাপ। নীরবতায়
ছুঁয়ে যাবে নিজের স্মৃতিময় মুহূর্তগুলো ,খসে
খসে পড়বে চাঁদনী রাতের আকাশে জ্বলজ্বল
তারার মতো। অবশেষে একটা সময় নিজেকে
ভীষণ একা ভীষণ একা মনে হবে যা হওয়ার
নয় তা-ই হবে যা ঘটবার নয় তা-ই ঘটবে শুধু বদলে
যাবে সময় পরিবেশ আর পরিস্থিতি হ্যাঁ এটাই সত্য।
————————————

বিজয় তুমি
– শিহাব ইকবাল

বিজয় তুমি একাত্তরে
বাংলাদেশের মুক্তি,
তোমায় যারা শ্রদ্ধা করে
তারাই তোমার শক্তি।

বিজয় তুমি শেখ মুজিবের
মার্চ ভাষণের বাস্তব,
বাংলাদেশের বাঙালিদের
লাল-সবুজের উৎসব।

বিজয় তুমি বাংলাদেশের
সব মানুষের ঐক্য,
সকল মনের সকল মুখের
স্বতঃস্ফূর্ত বাক্য।

বিজয় তুমি ডিসেম্বরে
বীর বাঙালির উল্লাস,
তোমায় যারা হত্যা করে
তারাই তোমার সন্ত্রাস।

বিজয় তুমি বাংলাদেশে
সব মানুষের অর্জন,
তোমায় যারা ভাগ করেছে,
তাদের শোনাও গর্জন।
——————————————-

বাহানা
চম্পা রায়
2/12/2022
***-***-***-***
বক তুই মাছ ধরলি কেন
আমার খন্দে বসে
তুই কি সব একা খাবি
সকাল ,দুপুর এসে।

আমার ঘরের ফুক ফুকি মেও
সারাদিন তার আওয়াজ,
মাছ না পেলে ভাত ছোবে না
এমনই তার মেজাজ।

বাটি ভোরে
দুধ না দিলে
মন কেমনের সুর
মন কেমনের দিশা নিয়ে
চেয়ে রয় কোথা দূর।

মালকিন মম মম ডাকে ওরে
আয়না মানিক সোনা
দুধ দেবো আর মাছ দেবো রে
ধরিস না আর বায়না।

মেঠোপথে লেজ নাড়িয়ে
মিয়াও মিয়াও সুর
ডাকছে কেন মন যে ভাবে
ও যে বেজায় বেসুর।

দৌড়ে গিয়ে মম মম তাকে
ডেকে বলে আয়,
আয়না সোনা থাকিস না তুই
অমন ডাকের বাহানায়।
——————————————

Powered by themekiller.com