Breaking News
Home / Breaking News / দুই বাংলার বৃহত্তম নেটওয়ার্ক দৈনিক শব্দনগরের সেরা চার সাহিত্য

দুই বাংলার বৃহত্তম নেটওয়ার্ক দৈনিক শব্দনগরের সেরা চার সাহিত্য

ভালোবাসার নানারূপ
মোঃ আবু বকর সিদ্দীক
(সিদ্দীক সাধু)
১৫-০২-২০২২

ময়না ভাই। বয়স ৭১। খুবই হাসিখুশি মানুষ। সুবিন্যস্ত কথার বাঁধন। বলার ভঙ্গি ছান্দিক।কন্ঠ মিষ্টি।বয়স কালে কোকড়ানো চুল। ঘন। চিকে চিকে কালো। মুখায়ব ও শারীরিক গঠন মাশাল্লাহ। লম্বা।

ময়না ভাই, একা থাকতে পারে না। ঘুরতে যাবে সাথে বন্ধু নিয়ে যাবে। গ্রামের বাজারে চা পান করবে,দশ পাচজন ঘিরে থাকবে। বিল দিবে কে? অলিখিত ঘোষণা, দিবে ময়না ভাই। গ্রামের সাঁকো ভেঙ্গেছে সারবে কে? ময়না ভাই। কোন গরীবের অসুখ হয়েছে, ডাক্তারের কাছে নিবে কে, ময়না ভাই। সে সময় গ্রামের রাস্তাঘাটের অবস্থা মোটেই ভালো ছিল না। তখন মাত্র ইউনিয়ন পরিষদের কাঁচা রাস্তা শুরু হয়েছে। কোন গাড়ি ঘোড়া চলে না।

যাঁদের পয়সা কড়ি হয়েছে তাঁদের কেউ কেউ সাইকেলে চলে। সে সময় ভালোমানের র‍্যালি, হারকিউলিস সাইকেল পাওয়া যেত। র‍্যালী সাইকেল হালকা, চলতে আরাম, হারকিউলিস শক্ত মজবুত, ভারী।এ সকল সাইকেল আগের মানের পাওয়া যায় কি না জানি না। সে সময় বিয়ে সাদীর কথা পাঁকা করার সময় মুরব্বীরা ছেলের জন্য সাইকেল,হাত ঘড়ি বা রেডিও দাবী করতো। নন্দিত চলচিত্র নির্মাতা আমজাদ হোসেন এর গোলাপী এখন ট্রেনে সাইকেল নিয়ে কত কিছু হয়েছে, সিনেমায় সবাই দেখেছে। তাছাড়া সে সময় যাদের নাম দু’চার গ্রামের মানুষ চিনতো, তারা ঘোড়ায় চলতো।তবে তাদের সংখ্যা বেশী ছিল না। সত্তুরের দশকে মটর সাইকেল হঠাৎ হঠাৎ দেখা যেতো।ছেলেরা খেলা করছে, কাছ দিয়ে মোটর সাইকেল চলছে,আর যাবি কোথায়? খেলা ফেলে ছেলেরা মোটর এর পিছনে দৌড় লাগাতো। এখন দেখে দেখে অভ্যস্ত হয়েছে কেউ ফিরেও তাকায় না।

ময়না ভাই গ্রামে সমিতি করে। কিশোর, যুবকরা সদস্য হয়। সমাজের কাজ করে। গরীবকে সাহায্য করে। এ জন্য টাকার দরকার। কেউ বাড়িতে লুকিয়ে পাট বে্চেঁ,ধান বেঁচে।সমিতি চাঁদা দেয়। অনেক অনেক ধরা পড়ে। মুরব্বীদের বকা শুনতে হয়, উত্তম মধ্যমও খায়। পরে দোষ পড়ে ময়না ভাইয়ের উপর।শুরু হয় গালাগালি।
কয়েকটি পশুর বাচ্চা মানুষের গালাগালিতে খুব উচু স্থান লাভ করেছে । এ সব ক্ষেত্রে পশুর কদর অন্যরকম দেখা যায়। গোস্বা বা রাগের সময় এ সব পশুদের নাম প্রথম মনে পরে। এ কি যা তা বিষয় নাকি! মানুষের রাগের প্রকাশের বন্ধু।তবে এক্ষেত্রে ফার্স্ট ক্লাস পায় দু’টি পশু। শুয়োর এবং কুকুর বা কুত্তা। এ গালাগালিতে শুয়োর এবং কুত্তা নিজেরা আপোষ করে অঞ্চল ভাগ করে নিয়েছে যেমন, দক্ষিণ অঞ্চলে শুয়োর, উত্তর অঞ্চলে কুত্তা। সেকেন্ড ক্লাস পায় গাধা। গাধার বাচ্চা গালিটি একটু সম্ভ্রান্ত বুনিয়াদী গালি। ভোট হলে গাধার বাচ্চা গালিটি কখনো মেজরিটি পাবে না।

ময়নার ভাইয়ের বাবা হাতেম তালুকদারের নিকট মানুষ বিচার দেয়। তালুকদার সাহেব আমরা আর পারছি না। বিহিত করুন। ছেলেরা সব বখাটে হয়ে গেল। কেউ কথা শুনে না। বিকাল হলেই সবাই ময়নার কাছে দৌড়ায়। কি যাদু করেছে জানি না। জানেন, আমাদের গাধার বাচ্চারা ময়না ভাই করতে করতে জান অস্থির করে তুলেছ। দূঃখের কথা বলবো কি? গরীবকে সাহায্য করবে বলে তারা পাট, ধান চুরি করে বেঁচতে শুরু করেছে।গ্রামে বোধ আর মুরব্বীরা থাকতে পারবে না।

তালুকদার সাহেব ময়নাকে ডেকে পাঠালেন।বকাঝকা দিলেন। নিজেও কিছু করো না, অন্যকেও মানুষ হতে দিবে না।ময়না ভাই কিছুক্ষণ মাথা নীচু করে থেকে চলে গেল। কিন্তু কাজ থামলো না। দেখা গেল গ্রামের গরীব মানুষ ময়না ভাই নাম বলতেই পাগল। তালুকদার সাহেব যখন বলেন হবে না, ময়না ভাই তখন বলে হবে। গ্রামের সুপার হিরো।

কলেজে ভর্তি হয় সেখানেও একই অবস্থা। আড্ডা, হৈ চৈ, দল বেঁধে বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত। প্রিন্সিপাল সাহেবের নিকট আজ এ দাবী নিয়ে যায়,তো কাল অন্য দাবী নিয়ে হাজির। মেয়েরাও ময়না ভাইয়ের দলে ভিড়ে যায়।সবার হিরোর সাথে কার না কথা বলতে ইচ্ছে করে!কথা বলতে বলতে কোন মেয়ের চোখ ছোট হয়ে যায়। চোখের তারায় ঝিলিক বয়ে যায়।ময়না ভাই এসব নিয়ে ভাবে না।তবে বন্যার সময়, শীতের মধ্যে, অন্য দূর্যোগের সময় ময়না ভাইয়ের এদের খুব কাজে লাগায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলো। ময়না ভাই কখনো ক্লাসের সেরা ছাত্র ছিল না। কিন্তু মাঠে ময়দানে, বিপদে আপদে ময়নাভাই ছিল সর্বেসর্বা।খেলাধুলায় বলুন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বলুন ময়না ভাইকে চাই। মেয়েদের বিষয়ে ময়না ভাইয়ের একই অভিরুচি। ফারজানও সমান তালের মেয়ে। খোলা মেলা দৃষ্টি ভঙ্গি। আড্ডাবাজ মেয়ে। একদিন সবার সামনে বলেই ফেললো ময়না ভাই আমি তোমাকে পছন্দ করি, ভালোবাসি। ভিমরুলের চাকে ঢিল মারার অবস্থা। দিনটি ছিল ১ ফাল্গুন। শিমুল, পলাশ, কৃষ্ণচুড়া ফুল ফোটার মাস। যে সময়ের কথা বলছি, সে সময় ভ্যেলেন্টাইন ডে সম্বন্ধে অন্ততঃ বাংলাদেশের মানুষ জানতো না। আর এ নিয়ে আলোচনাও হতো না। যাহোক, ফারজানা তো বলেই খালাস। কিন্তু ছাড় দেয়ার পাত্রী নয়। ময়না ফারজানার নামে উপস্থিত সবাই শ্লোগান দিয়ে বসলো। পাশে বসা শাবন্তী, বাসন্তী, অপারাজিতা, দিতি, চৈতি কিন্তু চুপ করে থাকার মেয়ে না। তারা থামায়, বললেই হলো ভালো বাসি! তাদের প্রত্যেকের মনেই বাসনা ছিল, ময়না ভাই তার হবে। কত রাত নির্ঘুমে কাটিয়েছে তার হিসাব কে রাখে। তখন মোবাইল, ম্যাজেঞ্জার, হোয়াটস অ্যাপ ছিল না। যে কথা মুখে বলা যায় না, তা কাব্যরসে টাইটম্বুর করে প্রেম পত্র লেখাই ছিল একমাত্র ভরসা। অনেক ছেলে বিকাল হলেই সাজগোজ করে শার্টের বোতাম খুলে মেয়েদের হলের চার দিকে প্রেম কুমার সেজে ঘুর ঘুর করতো।যদি ভাগ্য ফিরে যায়। কিন্তু মেয়েরা যে ছ্যাবলা ছেলেদের পছন্দ করে না এ কথা মগজে ডুকতো না। তাছাড়া অভিভাবক মহলের চাপ ছিল। পড়াশোনার জন্য ঢাকা পাঠিয়েছি, গরু বাছুর বিক্রি করে, জমি বন্ধক দিয়ে পড়ার খরচ যোগাই, অন্য কিছু যাতে না শুনি। অন্যকিছু বলতে অভিভাবকগণ প্রকান্তরে প্রেম পিরীতির কথা বলতেন চাইতেন। যাই হোক, আডডার মেয়ে বন্ধুরা ময়না ভাইকে ডেকে বলা শুরু করলো, ময়না ভাই সর্বনাশ হবে গো, সর্বনাশ হবে। ফারজানার নানা কীর্তি, বহু জনের সাথে মেলামেশার কথা বলে ময়নাভাইয়ের কান ভারী করতে থাকলো। ময়না ভাইয়ের দূঃখ হবে বলে দু’ একজন কে কেঁদেও ফেললো। ময়নাভাইকে নিয়ে যেমন ঝড়ের দিনে গাছ থেকে পড়া আম কুড়ানোর ঝগড়া ও তেমন কাড়াকাড়ি শুরু হলো। কিন্তু কি জানি কি হলো আল্লাহ মাবুদ জানেন, ময়নাভাই অনেকটা শান্ত হয়ে পড়লো। ময়নাভাই ফারজানাকেই বিয়ে করে বসলো। সবাই ফারজানাকে ভাবী বলা শুরু করলো।

ফারজানা ভাবীর মধ্য সব বিষয়েই কর্তৃত্ব করার স্বভাব বিদ্যমান।বিয়ের পর ফারজানা ভাবীর মধ্যে আমুল পরিবর্তন ঘটলো।ভাবী অন্তর্মূখী স্বভাব হয়ে যায়।ময়না ভাইয়ের স্বভাব আগের মতই। বহির্মূখী। ময়না ভাইকে বিয়ে করার পর ভালোই দিন চললো। তখন শুদ্ধ কথার মিষ্টি আমেজ। বছর দু এক পরই বৌয়ের ভাষায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন এলো।ভাষার শুদ্ধতা বনেবাসে গেল। কথায় কথায় ঝগড়া, ময়না ভাই পূর্ব বললে ফারজানাভাবী বলে পশ্চিম।ময়নাভাই তাজা মাছ বাজার থেকে দেখে শুনে কিনে আনে, বৌ বলে পঁচা। না কুটে ফেলে রাখে, কেউ আসলে বলে, দেখ কি আক্কেল পঁচা মাছ কিনে এনেছে।প্রমাণ চাও, দেখ। মাছ বাবাজী ততো ক্ষণে পঁচে ভুত।
মানুষের সম্মুখে ময়না ভাইকে শরম দিতে পারলে ভাবী পূণ্যের কাজ মনে করে। এ এক বিশ্রী কারবার শুরু হলো। ময়না ভাই লোক লজ্জার ভয়ে বৌয়ের কোন কথা লোকের কাছে বলে না। কিন্তু কোন মেহমান আসলে ময়নাভাইয়ের বোকামী, নির্বুদ্ধিতা, কৃপণতা ইত্যাদি বলে ভাবী শান্তি পায়। দু একজন আগুন্তুক এ সূযোগে ফারজানা ভাবীর সাথে তাল দেয়। বলে আপনি দেখে ঘর সংসার করে গেলেন। আবার বলে আপা এ জীবনতো একবারই আসে। কেন মেনে নেন। কপট মায়া দেখায়। অহেতুক রুমাল দিয়ে নিজের চোখ মুছে । ফারজানা ভাবীর এমন সমঝদার মানুষের বুকে ঝাপিয়ে পড়েতে ইচ্ছে করে।

দুজনে জীবন যাত্রায় বিশাল পার্থক্য। মাঝে মাঝে কথা বন্ধ। দু’জনের দু’ঘরে দু’বিছানা।
তবে তারাও অভিনয় করতে জানে বটে।পাড়া পড়শী কেউ আসলে মনে হয় তাদের মত সুখী পরিবার ইহজগৎ আর নেই। ঝগড়া বিবাদ ও চরম বৈপরিত্ব্যের মধ্যেও তাদের তিন সন্তান জন্ম নেয়। কেউ কেউ আবার এ নিয়ে ঠাট্টা করে। যাক সে কথা।

তালুকদার সাহেব মারা গেছেন। সন্তানদের মধ্যে জমি জমা বাটোয়ারা হয়ে গেছে। ফারজানার চাপে ময়না ভাই উত্তরা বাড়ি করেছেন। গ্রামে ভিটে বাড়িটুকুও অবশিষ্ট রাখে নি। এর মধ্য ফারজানার মধ্য অন্য এক উপসর্গ দেখা দেয়। ময়না ভাইয়ের সব কিছুতেই সন্দেহ। সামাজিক কাজে ময়না ভাই জড়িত থাকে। নারী পুরুষ সবাই আসে। ফারজানাভাবীর সন্দেহ হয় এত সময় করে কি? তার অফিসের কাছ দিয়ে গৃ্হ সাথী জয়তুনের যাতায়াত। বাসায় গিয়ে ফারজানা ভাবীকে জানায় খালুকে দেখলাম, কয়েকজন মাইয়া মানুষের সাথে চা পান করতাছে। ফারজানা ভাবী হাতে চাঁদ পায়। তার হাতে ২০ টাকার একটি নোট গুঁজে দিয়ে বলে, তুই চোখে চোখে রাখবি। হাতে নাতে ধরে দিবি আরও বকশিস পাবি। বলেন কি? আমি জয়তুন না। দেখবেন, একদিন হাতে নাতে ধরে দিবো।

একদিন একজন মহিলা বিচার নিয়ে ময়না ভাইয়ের অফিসে আসে। অফিসে আরো কয়েক জন রয়েছেন। স্বামীর স্বভাব চরিত্র ভালো নয়। এ অভিযোগ গুলো মহিলা ময়না ভাইকে একান্ত বলতে চান। পাশের টেবিলে ময়নাভাই মহিলার অভিযোগ মনোযোগ দিয়ে শুনছে। আর যাবে কোথায়!
ফারজানা ভাবী খবর পায়। ঝড়ের বেগে ময়না ভাইয়ের অফিসে ঢুকে। পায়ের স্যান্ডেল খুলে ময়না ভাইয়ের দু’গালে কয়েক ঘা লাগিয়ে,মহিলার উপর ঝাপিয়ে পড়ে। উত্তর অঞ্চল, দক্ষিণ অঞ্চলের সকল গালিগালাজ সম্বলিত করে সফল ভাবে প্রয়োগ করে সদর্পে প্রস্থান করলো। ময়না ভাই কোন রকমে মুখঢেকে চলে গেল।

ময়না ভাই আর ঘর থেকে বের হয় না। অতিরিক্ত রাগ, অভিমান, লাজ লজ্জায় স্ট্রোক করে বসে।ময়না ভাই সকলের আলোচনার মধ্যমণি হয়ে গেল। ফারজানা ভাবীর আচরণ নিয়ে দারুণ সমালোচনা হলো। এক সময় মানুষ তাকে ভুলতে বসলো।

আমরা তিন বন্ধু মিলে ময়না ভাইকে একদিন দেখতে গেলাম। যে দৃশ্য দেখলাম তা দেখে কপালে চোখ উঠে গেল। ফারজানা ভাবীর মুখে আগের কান্তি নেই। চোখের নীচে কালো দাগ। আমরা ড্রয়িং রুমে বসলাম। বাসার গৃহসাথী চা নাস্তা দিল। আমরা তাকে তাদের পরিবারের অবস্থা জিজ্ঞাসা করলাম। সে বললো খালুর জন্য খালা আম্মা কি যে করছে না দেখলে বিশ্বাস করবেন না। একজন বিবি রহিমা গো, রহিমা। রাতদিন খালুর সেবা করে যাচ্ছেন। খালুর সেবা তিনি অন্যকে করতে দেন না।নিজ হাতে খালুর নস্ট করা বিছানা পরিস্কার, গোছল করানো, শরীরে গন্ধ দূর করার জন্য পাউডার মাখানো,নিজ হাতে খাওয়ানো, বিকেলে বারন্দায় বসানোর কাজ করেন।নিজের জন্য তিনি কোন সময়ই রাখেন না। ঠিকমত খাওয়া দাওয়া করেন না। এমন মেয়ে মানুষ হয় না। বিষয়টি জেনে আমি থ লেগে গেলাম। আমার মনের মধ্যে অনেকগুলো প্রশ্ন ঘুর পাক করতে লাগল।

আমার একজন বন্ধুর কাছে কয়েকটি প্রশ্ন করলাম। ভালোবাসার বিয়ে, তবে ভাবীর আচরণ কেন এমন হলো?
বন্ধু বললেন ফারজানা ভাবী অতি মাত্রায় ময়না ভাইকে ভালোবাসতেন। ভালোবাসার তীব্রতায় ফারজানা ভাবী ময়নাভাইকে নিয়ে কল্প রাজ্যে ঘুর পাক খেতেন। প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মধ্য পার্থক্য দেখে তিনি ময়না ভাইকে মোটেই সহ্য করতে পারেন নি। অতিরিক্ত ভালোবাসা অনেক সময় প্রতিকুল আচরণের মধ্যে প্রকাশ পায়।

২. ফারজানা ভাবী অতীত কে ভুলে গিয়ে নিজের ঘরে নিজের মত করে স্বামীকে নিয়ে বসত করার স্বপ্ন দেখেছে। কিন্তু ময়মা ভাই সবার মধ্যে নিজকে প্রকাশ করতে চেয়েছেন। ফারজানা ভাবী প্রত্যাশা করেছেন স্বামীর কাছে স্ত্রী হিসেবে তার গুরুত্ব বেশী। কিন্তু ময়না ভাই স্ত্রীর চেয়ে অন্যকে বেশী গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছে। বিষয়টি ভাবীকে ক্ষিপ্ত করে তুলেছে।

৩. ফারজানা ভাবী কল্পনার দোলাচলে না চলে স্বামীর স্থায়ী নিরাপত্তা চেয়েছে। এজন্য ময়নাভাইকে গ্রামের জমিজমা বিক্রি করে শহরে স্থায়ী ভিত্তির উপর দাড় করাতে চেয়েছেন।

৪.স্বামীর সাথে বৈপরিত্য চিন্তা চেতনায় অনেক সময় জৈবিক চাহিদা অতৃপ্ত থাকে। মানুষ যদি অতৃপ্ততার বিষয় জানতে পারে তখন স্বামী সম্বন্ধে তার মনকে আরো বিষিয়ে দেয় এবং সূযোগ নেয়ার চেষ্টা করে। অনেক সময় বাস্তবে অঘটন না ঘটালেও মানুষ কল্পনায় মাঝে দূর্বল হয়ে পড়ে। এ জন্য সমবেদনা জানানো মানুষের বুকে শান্তি চায়, তৃপ্তি চায়। বুকে জড়িয়ে ধরার ইচ্ছেটা বাস্তব নয়, কল্পনা মাত্র।মানুষের মন কতো পাহাড় পর্বত, বন বাদারে ঘুরতে চায় কিন্তু বাস্তবে তা হয় কি!

৫. কোন স্ত্রীই স্বামীর সাথে অন্য মেয়ের ঘনিষ্ঠতা সহ্য করতে পারে না। এর প্রতিক্রিয়ায় সে যে আচরণ করে তার উপর নিয়ন্ত্রন রাখতে পারে না। এ জন্য স্বামীর অপছন্দের গালিগালাজ অবলীলাক্রমে চালিয়ে যায় এবং পরবর্তীতে গালিগালাজে অভ্যস্ত হয়ে পরে।

আমি বন্ধুর ব্যাখ্যা শুনলাম। এ জীবন ক্ষণস্থায়ী। মান অভিমানেই যদি সময় চলে যায়,সুখের সুরস পানের সময় কোথায়? ব্যাখ্যা মেনে ঘটনা ঘটে না, ঘটনার পরই ব্যাখ্যার সৃষ্টি হয়। ভালোবাসার জন্য লাগে আবেগ, তবে যুক্তিহীন আবেগের স্থায়ীত্বই বা কতটুকু! শেষ বয়সে মনে আঘাত পাওয়ার ব্যথা খুবই তীব্র, অসহনীয়। ময়না ভাইয়ের জন্য দূঃখ হয়, ফারজানা ভাবীর জন্য লাগে মায়া।

——————————————–

15/02/22
রক্তে রাঙ্গা প্রেম দিবস

সুশান্ত কাঞ্জিলাল

সেদিনও ছিল শীতের আমেজ
ছিল প্রেম প্রণয়ের প্রতীকি দিন
ভূমন্ডলের মানুষ মেতেছিল প্রেম নিবেদনে ।
কারুর হতে ছিল লাল গোলাপ
কারুর কন্ঠে ছিল প্রেম উন্মাদনার গান ।
এই খুশিতে সামিল হতে ব্যাকুল ছিল দুটি প্রাণ
একজন ছিল অপেক্ষার দৃষ্টি বিছিয়ে
ঘরের কোনে
আর একজন রাইফেল হাতে সীমানায়
কথা হয়েছিল দুই জনার হবে দেখা
এই বিশেষ দিনটায় ।
না, ফেরা হলো না আর
বারুদের স্তুপে হয় বিস্ফোরণ
ঘটে যায় অনেক বড় অঘটন ।
পৃথিবী যখন মেতেছিল প্রেম নিবেদনে
ঠিক সেই সময়
অপেক্ষায় থাকা মানুষগুলির চোখ যায় ভিজে
হৃদয় ভেঙে হয় টুকরো টুকরো ।
প্রেমিকার প্রেমিক ফিরল কফিন বন্দী হয়ে
প্রেমের লাল গোলাপ বিবর্ন হয়ে
ঝড়তে থাকে কবরে শ্মশানে ।
লাল রক্তের রঙে রেঙ্গে প্রেমের সূর্য
ধীরে ধীরে যায় ডুবে
রক্তে রাঙ্গা প্রেম দিবস
পৃথিবীর বুকে কলঙ্ক হয়ে রবে ।

——————————————-
প্রথম প্রকাশঃ ১৫ফেব্রুয়ারী২০২২খৃঃ
#স্বরচিত_কাব্যকথন

”ভাষা শুদ্ধ যত্নে”

★মুহা্ম্মাদ কিবরিয়া বাদল★

ভাষা কখনো বিদ্বেষ নহে
ভাষায় ভাবের উন্মেষ
মনের ভাবের সরল প্রকাশ
নহে দর্শণ-একদেশ।
ভাষায় ভাষায় মিত্রতা রবে
হবে,ভাবের আদান প্রদান
সমৃদ্ধ হবে ভাষার আঙিনা
ভাবই ভাষার প্রমান।
সকল ভাষাই নিজ আঙিনায়
সেরা সে যে হয় অনন্য
কোনো মানুষের নয়কো তৈরী
এ যে মহামহিমের বদান্য।
মানবতার সেতুবন্ধনে ভাষা
জাগায় মনেতে আশা
সংকীর্ণতায় বিপথগামী
উদারতায় যা রচে খাসা।।

খাঁটি বাংলায় ঊনিশ শব্দ
বাকিরা এলো কোত্থেকে?
ইংরেজির কোন শব্দ কি আছে
বাংলার মত নিজ থেকে?
সংকীর্ণতা কোনকিছুরই
কল্যান বয়ে আনেনা
উদারচিন্তা সুবিবেচনা
নিয়ম ছাড়া আসেনা।
যে নিয়মে চলছে বাংলা
হাজারো বছর ধরে
সেই নিয়মের-ব্যত্যয় কি
আসবে উপকারে??

বিন্যস্ত বর্ণমূলেই
লিখনে ভাষার ভাব
উচ্চারণে তার ধ্বণিরই
হয় যদি রে স্বভাব।
‘কার’ যবে ওহে ব্যঞ্জ্যণাতে
রাখে নিজের মান
প্রমিত তখনই যায় যে বলা
ধ্বনিতে শুদ্ধ তান।
ভাষা বিকৃতি উচ্চারণে
বিকৃত হয় বানানে
বিবর্তনে হয় প্রয়োজন
নবতর সংযোজনে।।

আজকে মোদের প্রাণের ভাষা
নৈরাজ্যের কবলে
বানানরীতি হারালোরে হায়
জেগে ওঠো সকলে।।
ভাষা শুদ্ধ যত্নে ওরে
ভাষা শুদ্ধ মমতায়
ভাষা শুদ্ধ জ্ঞান ও বোধে
মননশীলতা যবে আত্মায়।
রচনাঃ২২মাঘ১৪২৮বঙ্গাব্দ। ৫ফেব্রুয়ারী২০২২খৃস্টাব্দ। হালিশহর, চট্টগ্রাম।।

——————————————–
চক্রবৎ
অভিজিৎ ব্যানার্জী
স্বরবৃত্ত ছন্দে
১৪/০২/২০২২
—————————————–
দিনের শেষে রাত্রি আসে
রাতের শেষে দিন,
সুস্থ-সবল শরীর আবার
রুগ্ন হয়ে ক্ষীণ।

শিশির মেখে কুসুম ফোটে
আবার ঝরে যায়,
সৌরভ তার ধুলায় মেশে
আঁধার নামে গায়!

সূর্য ওঠে কিরণ ছোটে
উজ্জ্বল হয় ঘর,
সূর্য ডোবে আঁধার নামে
মুখটি বুজে চর!

সধবা ওই বিধবা হয়
যখন ভাঙে জোড়!
হায়! বিধাতা কেমন খেলা!
কেমন লীলা তোর?

মরুর বুকে বরফ জমে
নদীর বুকে চর!
যায় না বোঝা বিধির খেলা
কে আপন কে পর!

যে বাঁশেতে আগুন জ্বলে
তারই অঙ্গে সুর!
আপন যারে ভাবি আমি
সেই হয়ে যায় দূর!

——————————————–

Powered by themekiller.com