Breaking News
Home / Breaking News / দুই বাংলার বৃহত্তম নেটওয়ার্ক দৈনিক শব্দনগরের সেরা চার সাহিত্য

দুই বাংলার বৃহত্তম নেটওয়ার্ক দৈনিক শব্দনগরের সেরা চার সাহিত্য

ছুঁয়ে যাবো
**********
মাহমুদ শাহ আলী
তাং ১৩ই ফেব্রুয়ারী ২০২২

ও নন্দিনী —
অপলক দৃষ্টিতে এমন করে,দেখছো কি বলো আমার দিকে?
দেখতেই যদি চাও এসো,মন ভরে দেখো
চোখে চোখ রেখে।

চোখ নত করে নয় গো নন্দিনী
যদি পারো হৃদয় দিয়ে
অধর ছুঁয়ে দেখো,
ভেবে দেখোতো তোমায় উষ্ণতা স্পর্শ করে কি না
জাগে কি না স্পন্দন!
জানো নন্দিনী??
এভাবেই কতো হৃদয় আগুন যে নিভে গেছে
কোন হিসেব রাখিনি
কবে, কখন কিভাবে কিছু নেই দৃষ্টিতে
ভেসে গেছে হৃদয় বৃষ্টিতে
যদি পারো তোমার হৃদয় দিয়ে
নিভে যাওয়া আগুন জ্বালিয়ে যাও
তোমার অধর চুম্বনে
পারবে কি?
হৃদয় ধমণীতে একটুও রক্ত যদি প্রবাহিত হয়
অনুভুতিগুলো যদিও ম্লান হয়!
বুঝবে তবে,
তুমি বুঝে নিও এখনো তোমার জন্যই বেঁচে আছি
একটু ছোঁয়ার আশায়!
তুমিতো বুঝতেই চাও না
জোয়ারের আহ্বানে না হয় খোঁজে নিও একটুকরো মুক্তো।

তুমি জানো কি নন্দিনী?
হয়তো জানোই না,
মুক্তো খোঁজে পাওয়া খুব দুরূহ
এতো সহজ নয় মুক্তো খুঁজে পাওয়া
এই অন্ধকার নিষিদ্ধ মানব যমুনায়

তুমি অপেক্ষায় থেকো
এ রজনী পোহালে পরেই
তোমায় ছুঁয়ে যাবো
চলে যাবো শেষ শয্যায়
নিশ্চিত ছুঁয়েই যাবো—–

—————————————–
পুনঃপ্রকাশ
ছোট গল্প।
শিরোনাম-বৃষ্টি তোমাকে দিলাম।
লেখক-অমি রেজা।
১৩-০২-২০২২
——————————-
এই যে সাহেব,শুনছ-
রোসান পিছন ফিরে দেখে,
ওওও পায়েল,আচ্ছা তোমাকে না বলেছি,আমাকে সাহেব ডাকবে না।
একশ বার ডাকবো,হাজার বার ডাকবো।
তাতে তোমার কি।

আজব মেয়ে এই পায়েল। সাঁওতালি।একটু মোখরা টাইপের। কিন্ত ওর মনটা,একদম শিশুর মতো,নিষ্পাপ। উপজাতি হলেও পায়েল কিন্ত অনার্স এ পড়ছে।
এছাড়া দেখতে ও সুশ্রী। প্রথম দিন ওকে দেখে, আমি ভেবেছিলাম জাপানিজ কেউ। কিন্ত আমাকে যখন জিজ্ঞাসা করলো,প্রজেক্ট ডিরেক্টর কি তুমি?
ওর কথা বলার ধরন দেখে আমি হেসে ফেললাম।

আমি রোসান চৌধুরী।একটা ব্রিটিশ এন.জি.ও -র হয়ে কাজ করতে বাংলাদেশে এসেছি। আমি ব্রিটিশ ইমিগ্রেন্ট বাঙালি। “ওয়ার্ল্ড হেলথ এন্ড সেনিটেশন অব ট্রাইব পিপল”দের ওপর আমরা একটা গবেষনা করছি। আমি বাঙালী,তাই প্রজেক্ট ডিরেক্টর হিসেবে ব্রিটিশরা আমাকে দায়িত্ব টা দিয়েছে। আমার সাথে বাংলাদেশে র আরো কয়েকজন আছে। যারা এখানকার স্থানীয় বাঙালী।এরা সবাই শাখা অফিসে কাজ করে।

মোটামুটি এদের সবার সাথে আমার একটা টিউনিং হয়ে গেছে।এখানে আমি ছয় মাস থাকব। তারপর ইংল্যান্ড এ ফেরত যাব।
প্রজেক্টের জায়গাটার নাম হচ্ছে মানিকছড়ি। জেলা রাঙামাটি।
পায়েল,তাদের গ্রামকে রি-প্রেজেন্ট করছে আমাদের সাথে।

ঐ দূরে,দূর্গম পাহাড়ের উপর ওদের গ্রাম। নাম রাওটাম। রাও ওদের দেবতার নাম।
ওয়াংরু ওর বাবা। সাঁওতাল দের সর্দার।
পৃথিবী,বিজ্ঞানের কল্যানে অনেকদূর এগিয়ে গেলেও, আদিবাসীদের জীবন-যাপনে খুব একটা পরিবর্তন হয়নি।পৃথিবীর নানা দেশের, নানা ভৌগলিক ভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও,আদিবাসী গোত্রের জীবন,জীবিকা একই রকম আছে। অর্থাৎ এরা এখনও অন্ধকারেই পড়ে আছে। অবশ্য এর মাঝে কিছু ব্যাতিক্রম ঘটনা যে নেই তা নয়। সবচেয়ে বড় চমকপ্রদ ঘটনা হচ্ছে,পায়েলের লেখাপড়া
করাটা।
আশ্চর্য প্রান শক্তি এই মেয়েটার। তাদের গোত্রে সে-ই একমাত্র লেখাপড়া জানে। গ্রাম থেকে অনেকটা দূরে, পায়ে হাটা পথ পাড়ি দিয়ে,রোজ স্কুলে যেত পায়েল। কলেজও শেষ করেছে এভাবে।
এখন অনার্স করছে সরকারী কলেজে।

তাদের গ্রামের অনেকেই,তার এই লেখা-পড়া করাটাকে বাঁকা চোখে দেখত। অনেকেই তার পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরী করতে চাইত। কিন্ত ওয়াংরু কারো কথা কে পাত্তা দিত না। সে তার মেয়েকে অনেক ভালোবাসে। তার মেয়ে র মাঝে দেবী মাইয়াকে দেখতে পায় সে।
বাবা র প্রতি অনেক কৃতজ্ঞ পায়েল। এটা সে বলেছে,
রোসান কে।

মাথা পিছনে হেলিয়ে,নীল আকাশে র দিকে তাকিয়ে আছে রোসান। পাহাড়ের উপর থেকে এভাবে আকাশ দেখতে খুব ভালো লাগে তার। কেমন যেন মাথাটা ঝিমমম মেরে যায়। মনে হয় সব কিছু ঘোরছে। সাদা সাদা মেঘের দল ছুটে বেড়ায় নীল আকাশের বুক জুড়ে। রোসান দুই হাত পাখির মতো শূন্যে ছেড়ে দিয়ে, উড়তে থাকে আকাশে। আর বলতে থাকে,আমি ভালো নেই। ভালো নেই। সাথে সাথে প্রতিধ্বনি হতে থাকে আমি ভালো নেই,
ভালো নেই।
হঠাৎ খিল খিল শব্দ করে কে যেন হেসে উঠে।
রোসান,চমকে এদিক-সেদিক তাকায়।
এই যে এখানে সাহেব।
গাছের আড়াল থেকে পায়েল বের হয়ে আসে। কার সাথে কথা বলছিলে সাহেব।
কই,নাতো?
আবারও হাসতে থাকে পায়েল।

শুন সাহেব।
বলো।
আমার সাথে যাবে।
কোথায়?
ঐ যে জঙ্গলে।
নাহ্। ওখানে জংলী জানোয়াড় থাকে। বড় বড় অজগর থাকে।
তুমি দেখেছো।
না শুনেছি।
আমার সাথে চলো। তোমার কিচ্ছু হবে না। কথা দিচ্ছি। এই বলে আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগল।

মিথ্যা বলব না। আজব এক ভালো লাগায় মনটা ভরে গেল। পায়েল এর নরম হাত আমার হাতকে শক্ত করে ধরে রেখেছে। আমি মানা করতে পারলাম না।ও আমাকে গভীর জঙলে নিয়ে যেতে থাকে।

পায়েল,আর কতো দূর যাবে।
এই তো আর একটু। দেখো, সামনে কিন্ত একটা খাঁদ আছে। এই যে,বা’দিকটা ঘেষে এসো।
রোসান কিসের একটা শব্দ শুনতে পাচ্ছে। মিষ্টি একটা গন্ধও নাকে আসছে। হঠাৎ এক রাশ ঠান্ডা হাওয়ার ঝাপটা এসে লাগে তার চোখে মুখে।

ওয়াও!! ঝর্না। অনেক উঁচু পাহাড় থেকে গড়িয়ে পড়ছে পানি। যার ছলাৎ,ছলাৎ শব্দ শুনতে পেয়েছিল রোসান। কিন্ত বুঝতে পারছিলনা সে। কিসের শব্দ এটা। প্রখর সূর্যের আলোকরশ্মি ঠিকরে পড়ছে পানিতে। তার আলোতে জলকনা গুলোকে মুক্তো দানার মতো লাগছে। মনে হচ্ছে পাহাড়ের বুক চীরে মুক্তার বৃষ্টি ঝরছে। ওপরে নীল,সাদা ধবধবে আকাশ। ওফফফ। এমেজিং।

থ্যাংক ইউ পায়েল। এতো সুন্দর একটা জায়গায় আমাকে নিয়ে আসার জন্য। পৃথিবী কত সুন্দর। এই ছোট্ট বাংলাদেশটাও কম সুন্দর নয়। রোসান আবেগ আপ্লুত হয়ে,দুই হাতের তালু দিয়ে পায়েলের গাল চেপে ধরে। বলে,তোমাকে অনেক ধন্যবাদ। আমার মন ভালো করে দেয়ার জন্য।
পায়েল ভিন্ন এক ভালোলাগা নিয়ে রোসানকে দেখতে থাকে।

সাহেব,এই দিকটায় এসো। ঝর্নার পার ঘেষে পিচ্ছিল পথ পেরিয়ে সামনের দিকে এগোয়। তারপর সামান্য ডানে যেয়ে বামদিকে এগোয়।
এরপর পায়েল রোসান কে চোখ বন্ধ করতে বলে। শুন সাহেব আমি না বলা পর্যন্ত, চোখ খুলবে না কিন্তু।
ওকে ডিয়ার,রোসান বলে।

মিষ্টি গন্ধ টা এখন খুব তীব্র ভাবে পাচ্ছে রোসান।
এবার তুমি চোখ খুলতে পারো সাহেব।
ধীরে ধীরে রোসান চোখ খুলে।

তার চোখে ধাঁধা লেগে যায়। যতদূর চোখ যায় শুধু ফুল আর ফুল। বাগান নয়,প্রকৃতি নিজেই সেজেছে এই অপরুপ সাজে। মিষ্টি গন্ধটা ফুলগুলো থেকেই আসছিলো। সাদা আর হলুদ এ মিশেল ফুলগুলো। এগুলো কি ফুল পায়েল?
নাম জানিনা। আমরা বলি পাহাড়ি ফুল।
হিমমমম,ঠিক তোমার মতো,মনে মনে বলে রোসান।
কিছু বললে সাহেব।
না তো।
চলো, ফিরে যাই পায়েল।
হিমমম।
তোমার ভয় করে না পায়েল?
ভয় কিসের সাহেব,পাহাড়ে জন্ম আমার। পাহাড় -জঙ্গল -প্রকৃতি এরা আমার অস্তিত্বের সাথে মিশে আছে। আমি পাহাড়ি। এটাই আমার আসল পরিচয়।
পায়েল,রোসানের হাত ধরে হাটছে। পরম প্রশান্তি মেয়েটার চোখে মুখে।
রোসান তা লক্ষ করে।

কয়েকদিন ধরেই মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে।কখনও থামে। আবার শুরু হয়ে যায়।পাহাড়ের বৃষ্টি খুবই বিচিত্র।
চেনা জানা প্রকৃতিকে নিমিষেই বদলে দেয়। চলতি পথে পাহাড় ধসে পড়ার আশংকা থাকে। পায়েলের মন অজানা ভয়ে আতঙ্কিত।
সাহেব ঠিক আছতো?
সে বৃষ্টির জন্য গ্রামের বাইরে যেতে পারছে না।

এভাবে বসে থাকতে আর ভালো লাগছে না রোসানের। অনেকটা গৃহবন্দী। অনেকদিন পাহাড়ি ফুলটাকে সে দেখে না। তাকে দেখার জন্য তার দুই চোখ ব্যাকুল হয়ে আছে। আচ্ছা এসব সে কি ভাবছে। পায়েলের জন্য তার এমন লাগছে কেন? তবে কি সে,ফল ইন লাভ?
ওও মাই গড।

রোসানের ফোন বাজছে,সে হ্যালো বলতেই,
ওপাশ থেকে কেউ একজন বললো,
মিঃ রোসান। লন্ডন লোকাল অফিস থেকে বলছি।
জ্বি বলুন।
আপনাকে খুব তাড়াতাড়ি লন্ডনে ফিরতে হবে। উইদিন থ্রি ডেইস। আমরা আপনাকে আমেরিকার উহাইয়ো অঙ্গরাজ্যে একটা সেমিনারে অংশগ্রহণ করার জন্য পাঠাব। মেটার অব ফিফটিন ডেইস। তারপর আপনি আবার বাংলাদেশে চলে যেতে পারবেন। প্রশাসন আপনাকে সিলেক্ট করেছে। ওকে। আপনি এজ আর্লি এজ পসিবল,রওয়ানা হয়ে যান।
সে কালকেই রওয়ানা হয়ে যাবে।
সে পায়েলের কাছে লোক মারফত খবর পাঠায়।

কেমন আছো পায়েল?
ভালো। গলাটা কেমন যেন ম্লান শুনালো।
এতদিন কেমন ছিলে?
চলে যাচ্ছ সাহেব।
হিমমমম।
আর আসবে না,তাই না।
না,আসব তো। প্রজেক্ট শেষ করতে হবে না।
মাত্র’ত কিছুদিনের জন্য যাচ্ছি।
সেমিনার শেষ হলেই,চলে আসব।
সত্যি বলছ?
হিমমমম।
কেউ কথা বলছে না। ঝুপপপ করে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। দুজন দুজনের দিকে অপলক চেয়ে আছে।
মংলু এসে বলে গেল,গাড়ি এসে গেছ।
রোসান বলে, চলি তাহলে পায়েল। ভালো থেকো।
পায়েল আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না। সাহেব,বলেই রোসান কে জড়িয়ে ধরলো।
কাঁদতে লাগলো পায়েল।
রোসান তার হাত দুটি সরিয়ে দিয়ে বললো,আমি আসি।

পিছন ফিরে আর তাকায় না রোসান।
গাড়ি চলতে থাকে। মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে।
তার চোখে কি হয়েছে,সে তাকিয়ে রইল শূন্যে। বুকটা তার হাহাকার করতে লাগল।নিজের মনে বলতে লাগল, এই বৃষ্টি তোমাকে দিলাম,পায়েল।
কাঁদছে,পায়েলও। তার দুচোখ বেয়ে শ্রাবনের জলধারা ঝরতে লাগল।
সমাপ্ত।
অমি রেজা।


——————————————-

“চতুস্কোণ”
লেখিকা : সোহিনী ঘোষ
১৩/০২/২০২২

দিয়ার সাথে নীলের খুব বন্ধুত্ব। সব কথা তারাএকে অপরকে বলে। একেবারে খুঁটিনাটি বন্ধুত্ব যাকে বলে। সারাদিনের ছোটখাটো ঘটনাও তারা একে অপরকে না বলে থাকতে পারে না। দিয়া ভালবাসে মানসকে। আর নীল ভালবাসে অহনাকে। অনেকদিনের প্রেম তাদের। দুজনের ভালবাসার জনদের গল্পও তারা করে থাকে। কোন রাগ অভিমান ছাড়াই। যার যার প্রেম তারা তা নিয়েই সুখী আর খুশি।

চারজনের খুব বন্ধুত্ব। সব সময় তারা ঘুরে বেড়ায় আনন্দ করে। তাদের চারজনকে অনেকেই হিংসে করে। এত বন্ধুত্ব অনেকেই দেখেনি।

দিয়া-মানস আর নীল- অহনা বিয়ে করে সংসার শুরু করে। একসাথে হনিমুনেও যায়। তাদের পৃথিবী যেন চারজনের।

দিয়া নীলের সাথে সবকিছু শেয়ার করে,এমনকি ভালবাসার খুঁটিনাটি সম্পর্ক,সংসারের নিত্যদিনের কথা যেমনটা তারা আগেও বলত।

তবে আজকাল দিয়া নীলকে ফোন করলে অহনা বিরক্তি প্রকাশ করে। সবসময় ,তাদের একটা privacy আছে। দিয়া ফোন করে নীল সব কথা শোনে উত্তর দেয় দিয়ার বাড়ি যায়। এই সম্পর্কটা আজকাল অহনা যেমন অপছন্দ করে তেমনই মানসও।

রাগারাগি হলে মানস বলে বসে তাহলে বিয়ে তো নীলকে করতে পারতে। কিন্তু নীলকে দিয়া সেভাবে সেচোখে কোনদিন দেখেনি। আর নীলও না। অদ্ভুত একটা বন্ধুত্ব। যেখানে কোনো চাওয়া পাওয়ার হিসেবে নিকেশ নেই।

ছেলে মেয়ের বন্ধুত্ব মানেই তা খারাপ এটাই সমাজ ভেবে এসেছে। ঘি-আগুন। কিন্তু তা নয়। সব সময় তা হয় না। সব সময় এই খারাপ সম্পর্কটাই হবে তা নাও হতে পারে।

ভালবাসা,বিশ্বাস,ভরসা,বন্ধুত্ব এসব এক একটা হৃদয়ের বিষয়। এই অনুভূতি বলে বোঝানো বা ভাষায় প্রকাশ হয় না বা করা যায় না। মনের ভাললাগা চরম ভাললাগা। শরীর সেখানে নেহাতই তুচ্ছ জিনিস। নীল দিয়া সেইরকম বন্ধু। সবাই মেনে নিতে পারে না। সমাজ সংসার আর মানুষের মন দুটো আলাদা। চাইলেই আমরা সব করতে পারিনা। সমাজ সংসার পরিবার কে কি বলবে। এই বাধা তাদের মধ্যে দূরত্ব তৈরী করল।

আজও নীল দিয়া দুজন নামেই বন্ধু কিন্তু ফারাক লক্ষ যোজন। তবে মানসিক বন্ধুত্ব কেউ ভাঙতে পারবে না নীল দিয়ার।

——————————————

#দৈনিক_শব্দনগর
#চুম্বন

তেরো বছরের অপেক্ষার আজ অবসান ঘটতে চলছে উর্মি আর অয়নের। সেই কোন ছোটবেলা থেকে একে অপরের বন্ধু আজ একেবারে ছাদনাতলা।

উর্মি আজ ভীষণ ব্যস্ত।পাঁচবছর আগে বাবার ব্রেন স্ট্রোকে বাবাকে আর সে বাঁচাতে পারেনি।মাও তার পর থেকে কেমন একাকিত্ব ভোগে।উর্মিকেই একাহাতে সবদিক সামলাতে হয় কারণ বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান সে।

অয়ন আর উর্মি একই বয়সী। একসাথে পড়াশোনা বেড়ে হয়ে ওঠা।বিয়ে বিয়ে খেলতে খেলতে মজাটা যে এভাবে সত্যি হবে সেটা ওরা নিজেরাই ভাবেনি। সেবার যখন উর্মি স্টার পেলো উচ্চ মাধ্যমিকে আর অয়ন কোনোরকমে পাশ করলো সে কি অশান্তি বাড়িতে।
অয়নের বাবা তো একপ্রকার ছেলেকে ওড়িশায় পাঠিয়ে দিচ্ছিলেন মামার হাতে হাতে ব্যাবসা সামলানোর জন্য।
অয়নের বাড়িতে সবাই প্রায় ব্যবসায়ী, ছেলেও সেটাই হবে সবাই তাই আশা করেছিলো কিন্তু অয়ন তো অয়নই,
একদম আলাদা।অয়ন ভালোবাসতো গান গাইতে। লুকিয়ে লুকিয়ে একটা ব্যান্ডের সাথে প্র্যাকটিস ও করতো সেকথা অবশ্য শুধু উর্মিই জানতো।

উর্মি সবসময়ই অয়নয়কে তার গানকে সাপোর্ট করতো,বলতো,”তুই এগিয়ে চল আমি আছি”! উর্মির এই সহযোগিতায় অয়ন ধীরে ধীরে স্টেজ পারফরম্যান্সও করতে শুরু করেছে।আস্তে আস্তে অয়ন কলকাতার বুকে বেশ সুনামও অর্জন করেছে।

উর্মি মেয়েটা একটু চুপচাপ আর অয়ন ছিল তার জীবনে ফুরফুরে বাতাস।উর্মি অয়নকে যে কবে ভালোবেসে ফেলেছিল তা সে নিজেও জানেনা, তবে সেবার কলেজে বান্ধবীদের জোরাজুড়িতে ভ্যালেন্টাইনস ডে তে অয়নকে একটা চিঠি লিখেছিল আর সাথে দিয়েছিল ওর পছন্দের চন্দ্রমল্লিকা। সে সব দেখে অয়নের সে কি হাসি।

আসলে ছোটোবেলার সাথীকে কখনও প্রেমিকার চোখে অয়ন দেখেনি।তবে সেদিন ওকে কিছু বলেও নি শুধু একটা শব্দ ছাড়া,” পাগলী”!

তবে যেবার উর্মির বাবা চলে গেলেন সেবার শশ্মানে উর্মিকে বুকে জড়িয়ে ধরেছিল অয়ন।কপালে চুমু খেয়ে বলেছিল ভেঙে পরছিস কেন আমি তো আছি।ভালোবাসিস যখন একটুও কি ভরসা নেই।বাবার চিতার সামনে মুখচোরা মেয়েটা হাউহাউ করে কেঁদেছিল অয়নকে জড়িয়ে।সেসময় অয়ন আর মা ছাড়া যেন উর্মির আর কেউ নেই কোত্থাও নেই।

এভাবেই উর্মি আর অয়ন একে অপরকে বুঝতে শেখে। একে অপরের ভরসার কাঁধ হয়ে ওঠে। অয়ন প্রায়ই উর্মিকে মজা করে বলতো অধ্যাপিকা মহাশয়া আমার মতো একজন গাইয়ের সাথে কাটাতে পারবেন তো? সে শুনে উর্মির সে কি গোসা।আবার অয়নের সেই গানই উর্মির অভীমানের পারদকে গলিয়ে দিত।

সবই ঠিকঠাক চলছিল,এরমধ্যেই অয়ন একদিন অনুষ্ঠান শেষে বাড়ি ফেরার পথে ঘটে যায় এক বিপদ,অয়নের গাড়ি একটা লরির ধাক্কায়,একেবারে উল্টে পড়ে সে কি অবস্থা। খবর পাওয়া মাত্র অয়নের বাবা মা কে নিয়ে উর্মি নার্সিংহোম ছুটতে ছুটতে এসে জানতে পারে অয়ন আই সি সি ইউ তে।অবস্থা খুবই সংকটজনক। অয়নের বাবা মাকে উর্মি শক্ত হয়ে সামলেছিল। তবে সেদিন অয়নের প্রানটা বেঁচে গেলেও শিরদাঁড়ায় অতিরিক্ত আঘাত পাওয়ার কারণে অয়নের হাঁটার ক্ষমতা হারিয়ে যায়।হুইলচেয়ারই হয় অয়নের ভরসা।

উর্মি অয়নকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করে। একটা ঘটনায় এমন প্রানবন্ত ছেলেটা একদম চুপ হয়ে যায়।অয়নকে উর্মি ভীষণ ভালোবাসে তবুও অয়ন চাইতো উর্মির জীবনটা তার জন্য যেন কোনোভাবে নষ্ট না হোক।

কলেজ শেষে উর্মি অয়নের কাছে আসলেই অয়ন মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিত।কারোর করুনার পাত্র হতে অয়ন নারাজ।অয়ন আর গানও গায়না।ঘরে নিজেকে একপ্রকার বন্ধ করে ফেলে অয়ন আর উর্মিও নাছোড়বান্দা,

ঠিক আগের বছর আজকের দিনে উর্মি অয়নের ঘরে একপ্রকার জোর করে ঢুকে দরজাটা বন্ধ করে দেয়।অয়ন বলতে থাকে এটা কি করছিস তুই,দরজা বন্ধ করলি কেন? আর তোকে তো আজ ছেলের বাড়ির লোক দেখতে আসার কথা,তুই এখানে কেন?

উর্মির তখন চোখে জল, আস্তে আস্তে এগিয়ে আসছে অয়নের দিকে।অয়ন ততই হুইলচেয়ারটা পিছনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।এমন রুপ উর্মির আগে কোনোদিনও অয়ন দেখেনি।শাড়ীর আঁচল মাটিতে পড়ে খোলা চুল চোখের কাজল ঘেঁটে মেয়েটার কি অবস্থা।

” কেন এমন করলি তুই,আমি কি তোর কাছে খুব বোঝা?” উর্মির গলায় অভিমানের সুর

“আমি নিজেই এখন বাবা মায়ের বোঝা, আর তুই আমার বোঝা হবি কি করে, হাসালি” উত্তর দিল অয়ন

তাহলে তুই কেন মাকে এই সম্বন্ধটার কথা বললি,তুই কি করে ভাবলি তোকে ছেড়ে আমি অন্যের সাথে…..
কথাটা শেষ করতে না দিয়েই অয়ন বললো,” এতেই সবার ভালো”

—-“সবার ভালো!”আরও এগিয়ে আসছে উর্মি।

অয়ন আর চাইলেও পিছনে সরতে পারছে না দেওয়ালে চেয়ারটা একেবারে সেট হয়ে গেছে

উর্মি অয়নের একদম সামনে এসে দাঁড়িয়েছে,চেয়ারের উপর হাতটা রেখে উর্মি আরও অয়নের সামনে আসে,এক্কেবারে মুখোমুখি

অয়ন এবার নিজেকে আর চাইলেও সামলাতে না পেরে চোখ দিয়ে টপটপ জল ফেলছে

উর্মিও অয়নকে একটানে বুকে জড়িয়ে ধরে নিয়ে কাঁদছে।চোখের জলে ভিজে চলেছে দুজনেই তবুও থামছে না কেউ। উর্মির ঠোঁট অয়নের কপাল স্পর্শ করতেই অয়ন উর্মিকে আরও জাপ্টে ধরে শক্ত করে। “এত ভেঙে পরছিস কেন অয়ন আমি তো আছি”

“ছেড়ে যাবি না তো?”
অয়নের প্রশ্নে আরও অভিমান বেড়ে যায় উর্মির, হুমম ওই জন্য তো তুই তাড়িয়ে দিচ্ছিলিস।

“পাগলী”…..

অয়নের মুখে এই ডাক শুনতে হাজার বার উর্মি নিজেকে উজার করে দিতে পারে।

আজ এতগুলো বছর কেটে গেছে। আজ উর্মি আর অয়নের বিয়ে।উর্মি একাহাতে সবদিক সামলে হাজির হয়েছে বিয়ের পিড়িতে,

অয়ন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে কখন উর্মি পানের পাতাটা সরাবে আর অয়ন মুগ্ধ হয়ে তার উর্মিকে দেখবে কিন্তু উর্মি কিছুতেই পানের পাতা সারাচ্ছে না। সবাই জোড়াজুড়ি করছে তাও না,

অয়ন বুঝতে পারে উর্মিকে।এই বিয়ের পিঁড়ি পর্যন্ত আসতে মেয়েটা অনেক কষ্ট সহ্য করেছে অনেক অভিমানও পুষে রেখেছে মেয়েটা। অয়ন জানে উর্মির অভিমান কিসে ভাঙে তাই উর্মির প্রিয় গানটা ওই বিয়ের আসরে একঘর মানুষের সামনে সে গাইতে শুরু করে, তাও এতগুলো বছর পর। উর্মিও জানতো এই সুযোগ ছাড়লে অয়নকে আর রাজি করানো যাবে না নতুন করে আবার গান গাইবার জন্য,
অয়ন গেয়ে উঠল,” আমারও পরানো যাহা চায় / তুৃমি তাই ”
উর্মিও পানপাতা সারালো উলুধ্বনি শাঁখের আওয়াজে চারদিক গমগম করতে থাকলো।

দুজনের চোখই তখন ছলছল, মুখে হাসি, উর্মির মা একে অপরের হাত বেঁধে দিল চন্দ্রমল্লিকা দিয়ে।

ওরাও শব্দ উচ্চারণ করলো একসাথে

” আমার হৃদয় তোমার হোক

তোমার হৃদয় আমার হোক”।

✍️চৈতালী ধর বারিক

——————————————

Powered by themekiller.com