Breaking News
Home / Breaking News / মৃত সবাই বরগুনার, আজ গণকবর

মৃত সবাই বরগুনার, আজ গণকবর

অনলাইন নিউজঃ
ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে আগুনে পুড়ে যাওয়া লঞ্চের ডেক। উদ্ধার অভিযানের পর নানা জিনিসের সঙ্গে পড়ে থাকা বালাটি যেন জীবনের চিহ্ন বহন করছে। শীতের বাতাস কেটে মাঝনদীতে তরতর করে এগিয়ে যাওয়া লঞ্চটিতে বেশির ভাগ যাত্রী তখন ঘুমিয়ে। রাত ৩টার কিছু পর হঠাৎ চিৎকার-চেঁচামেচি। পড়িমড়ি করে উঠে যাত্রীদের দিগভ্রান্ত ছোটাছুটি শুরু হয়। কোন দিকে গেলে রক্ষা পাওয়া যাবে। তবু বাঁচার যেন পথ নেই। প্রাণ বাঁচাতে কিছু না ভেবেই তাঁদের অনেকে মাঝনদীতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। প্রিয়জন, সহযাত্রীদের না পেয়ে আর্তচিৎকার করতে থাকেন অনেকে। ঘুম থেকে উঠে ভয়ংকর এক বিভীষিকায় দিশাহারা সব যাত্রী। সুগন্ধা নদীর বুকে রাতের আকাশ লাল করে জ্বলে উঠতে থাকে লঞ্চটি। ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ নামের তিনতলা লঞ্চটি এভাবেই ঘণ্টাখানেক চলে নদীর এক পারে গিয়ে থামে। ততক্ষণে আগুন কেড়ে নিয়েছে শিশু, নারীসহ অন্তত ৩৫ জনের প্রাণ। দগ্ধ হয়ে, লাফিয়ে পড়ে আহত হয়েছেন শতাধিক। দগ্ধদের মধ্যে হাসপাতালে নেওয়ার পরে মারা গেছে আরো তিনজন। নিহতদের সবার বাড়ি বরগুনা বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। ঝালকাঠির গাবখানের কাছাকাছি পোনাবালীয়া ইউনিয়নের দেউরী এলাকায় সুগন্ধা নদীতে থাকা অবস্থায় লঞ্চটিতে আগুন ধরে। পরে ঝালকাঠি সদর উপজেলার ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের দিয়াকুল এলাকায় লঞ্চটি ভেড়ানো হয়। রাতের আঁধারে নিজেরাই ঝাঁপিয়ে পড়ে যাঁরা প্রাণ বাঁচিয়েছেন তাঁদের বেশির ভাগই আহত ও দগ্ধ হয়েছেন। ভোররাতে স্থানীয় বাসিন্দারা নৌকা নিয়ে তাঁদের সাহায্যে এগিয়ে আসেন। গতকাল সেখানে স্বজন হারানো শত শত মানুষ ভিড় করে আহাজারি করেন। লাশের গন্ধ আর আহাজারিতে শোকের মরুতে পরিণত হয় সুগন্ধার তীর। দিনভর উদ্ধার অভিযান চালিয়ে ফায়ার সার্ভিস, নৌ পুলিশ, কোস্ট গার্ড ৩৫ জনের লাশ উদ্ধারের পাশাপাশি ৭২ জনকে জীবিত উদ্ধার করে। নিহতদের বেশির ভাগই নারী, শিশু ও প্রবীণ। দগ্ধ হয়ে লাশ বিকৃত ও খণ্ডিত হওয়ায় স্বজনরা নিহতদের শনাক্ত করতে পারছেন না।
গতকাল রাত পর্যন্ত ৩৬ জনের লাশ বরগুনা জেলা প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এর মধ্যে চারজনের লাশ শনাক্ত করা গেছে। বাকি লাশগুলো শনাক্তে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পরে লাশগুলো গণকবরে দাফন করা হবে। স্বজনদের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল বিকেল পর্যন্ত অর্ধশত যাত্রী নিখোঁজ ছিলেন।
আহত ও দগ্ধদের মধ্যে ৭০ জনকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে এখন ৫৩ জন চিকিৎসাধীন। ঝালকাঠিতে ১৫ জন চিকিৎসাধীন। গতকাল রাত পর্যন্ত ১৭ জনকে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন হাবিব খানকে (৪৫) রাতে মৃত ঘোষণা করা হয়। ঢাকায় আনার পথে মাহিনুর আক্তার (৭) নামের এক শিশু মারা যায়। এ ছাড়া শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারজিয়া আক্তার (১০) নামের আরেক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

Powered by themekiller.com