Breaking News
Home / Breaking News / কবি কামরুজ্জামান স্বাধীন এর গল্পটা কাল্পনিক, ঘটনা সমাজে বিদ্যমান””

কবি কামরুজ্জামান স্বাধীন এর গল্পটা কাল্পনিক, ঘটনা সমাজে বিদ্যমান””

#গল্প
#শিরোনাম: গল্পটা কাল্পনিক, ঘটনা সমাজে বিদ্যমান।
#বুননে: কামরুজ্জামান স্বাধীন।

#প্রথম_খন্ড
——————
গোঙানির মত কান্নার শব্দে হিকমত আলীর গুম ভেঙ্গে যায়। ডান হাতের তালুর উল্টো পাশে দিয়ে চোখ কচলান, কানটা খাড়া করে শব্দের উৎস বোঝার চেষ্টা করেন।

বেড সুইচ অন করে আলো জ্বালান। বালিশের পাশে থেকে কালো ফ্রেমের পাওয়ার ফুল চশমা নিয়ে হিকমত সাহেব চোখে পড়েন। এরপর আস্তে আস্তে করে খাট থেকে নামেন। এই মুহূর্তে কান্নার আওয়াজ কমলেও গোঙানির শব্দ স্পষ্ট শোনতে পারছেন।

হিকমত সাহেবের স্ত্রী কিরণবালা একটা সপ্ত সুরের রিদম বজায় রেখে নাসিকা সঙ্কোচন আর সম্প্রসারণ করে কর্কশ অথচ তাল লয় সুরের সমন্বয় করে ডেকে চলছেন। দীর্ঘ চল্লিশ বছরের বিবাহিত জীবনে হিকমত সাহেব অভ্যস্ত হয়ে গেলেও আজ মধ্য রাতে কেমন যেন অদ্ভুত অনুভব করছেন। কান্নার শব্দের সাথে নাসিকার ডাক এক হয়ে রাতের পরিবেশটাকে কেমন যেন ভিন্নতর করে তুলেছে।

হিকমত সাহেব খাবারের রুমে এসে লাইট জ্বালিয়ে দাঁড়ান।‌ জগ থেকে পানি নিয়ে গ্লাসে ঢালেন কিন্তু ভয়ে তাঁর হাত বেশ কাঁপছে। নিজে গ্লাস উঁচু করে মুখের সামনে আনার শক্তিটুকো পাচ্ছেন না।‌ শব্দটা যেন এখন আরও সন্নিকটে, হিকমত সাহেব মনে করছেন শব্দটা আসছে বসার রুম থেকে, তাই আগ্রহ বশতঃ পা বাড়ান।

বসার রুম আর খাবারের রুমের মাঝখানে ভারী পর্দা। খাবারের রুমের এলইডি লাইট অন থাকায় বসার রুমে আলোআধারির অন্ধকার। হিকমত সাহেব আলো জ্বালাতে যাবেন ঠিক তখনি দেখতে পান ঘরের অন্য পর্দা গুলো কেমন যেন থরথরিয়ে কাঁপছে। সুইচের উপর হাত রাখলেও পুশ করার শক্তি পাচ্ছেন না।‌

হিকমত সাহেবের হাত পায়ের কাঁপোনি বেড়ে চলছে। শরীর ভীষণ রকম ঘামছে। কান্নার শব্দটা এখন তাঁর কানে কেমন জানি ফিসফিসানি মত লাগছে। ষাটোর্ধ্ব হিকমত সাহেব একজন প্রভাবশালী সরকারী আমলা ছিলেন। পেশাগত জীবনে ক্ষমতার জোরে বিত্তশালী হবার পাশাপাশি নারী শরীরে আসক্ত ছিলেন। এই নারী শরীরের আসক্তি তাঁর চরিত্রের নতুন কিছু নয়। ছাত্র জীবন থেকেই পকেটে ভরে বয়ে বেড়িয়েছিলেন।

শিরিন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের অনেক গুলো প্রেমিকার একজন, শিরিন হিকমত সাহেবের চার বছরের জুনিয়র ছিলেন। শিরিনের সাথে হিকমত সাহেবের সম্পর্কটা অনেক দিন ছিল। পরস্পর একে অপরকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতিতে অবিচল ছিলেন।

চতুর এবং চরিত্রহীন হিকমত সাহেব এই প্রতিশ্রুতির অন্তরালে কু-বুদ্ধির ছক আঁকেন। শিরিনকে মিথ্যে প্রলোভনে অভিনব প্রেমের মায়াজালে ফাঁসিয়ে শারীরিক সম্পর্কে মেতে উঠেন। এরই একপর্যায়ে শিরিন প্রেগন্যান্ট হয়ে পরেন। ততদিনে বজ্জাত হিকমত সরকারি প্রসাশনের বিসিএস ক্যাডার।‌

শিরিন দেখা করে বিস্তারিত সব অবহিত করার পর হিকমত সাহেব পাল্টে যান, সবকিছু অস্বীকার করে এ্যাভরশন করতে উদ্বুদ্ধ করেন। নিজেই একটা প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে যান। সবকিছু পরীক্ষা করার পর ডাক্তার ঝুঁকি আছে জানিয়ে এ‌্যাভরশন করতে অস্বীকার করেন। হিকমত সাহেব ক্ষমতার প্রভাব খাঁটিয়ে নিজেকে মুক্ত করেন।‌

এ্যাভরশন করানোর সাত দিনের মাথায় শিরিন আত্মহত্যা করেন। হিকমত সাহেব শিরিনের আত্মহুতির কথা শোনে হোঁচট খান। নিজেকে অপরাধী মনে করে ভীষণ ভাবে ভেঙ্গে পড়েন। একটা কাল বৈশাখী ঝড় যেন হিকমত সাহেবকে তছনছ করে দিয়ে যায়। সেদিনের পর থেকে হিকমত সাহেব প্রতি রাতেই একটা ফুটফুটে বাচ্চাকে স্বপ্নে দেখতেন। দেখতেন শিরিন বাচ্চাকে কোলে নিয়ে তাঁর দিকে এগিয়ে দিচ্ছে। বাচ্চাটা কোলে আসার জন্য আরও জোরে কান্না জুড়ে দিত।

হিকমত সাহেব কতক্ষন সুইচে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছেন আন্দাজ করতে পারছেন না। হাত নামিয়েও আনছেন না। কেমন যেন অসার দেহে দাঁড়িয়ে আছেন। ঝাঁপসা চোখে দেখতে পাচ্ছেন একজন মহিলা সোফায় বসে আছেন। মহিলার আঁচল ধরে একটা ছেলে দাঁড়িয়ে কাঁদছে।‌ হিকমত সাহেব চেনার চেষ্টা করছেন, মহিলার চেহারার সাথে শিরিন শারমিন এর অবয়বের মিল খুঁজে পেলেও ছেলেটাকে দেখে আঁতকে উঠলেন, এ যেন নিজের ছোট্ট বেলার প্রতিকৃতি।

ছেলেটিকে ডাকতে যাবেন কিন্তু অনুভব করছেন কেউ একজন যেন কন্ঠস্বর চেপে ধরে আছে, মুক্তির আকুতি জানিয়ে ছটফট করছেন, চিৎকার করতে যাবেন সেটাও পারছেন না।‌ দৌড়ে পালাবেন? সেখানেও যেন কেউ একজন পা শিকলে বেঁধে রেখেছেন।

(চলবে)

Powered by themekiller.com