কবিতা — মৃত্যুর সহবস্থানে
শ্যামল ব্যানার্জী
১৪/১০/২০২১
অনুমান ছিলো তুমি চলে যাবে।
তোমার চোখ দুটো মরা মাছির মতন,
নিস্পৃহ তখন,
কিছু ঝরা পাতা প’ড়ে ছিলো আশ্বিনের দোরে,
অপ্রয়োজনীয় কথাগুলো বুকের কবরেই থাক না কেন,
তুমি চাইলেই যেতে পারো।
তোমার বোহেমিয়ানি পনায় শয্যাহীন রাত
আঙ্গুলে কেটেছে বিলি অজস্র উপন্যাস,
তার অনেকটাই তিস্তা নদীর জলে গেছে ভেসে,
নিরঙ্কুশ শূন্যতায় না হয় এ রাতও কেটে যাক।
তবুও একদিন, তুমি কি করে যেন ওষ্ঠে আমার বিষ রেখে বলো, এটুকু পান করো।
তবু্ও আমি কাশফুল হই, দুলে যাই
অসময়ে, তোমার আসার সময়,
তুমি এলে, এক রাত কিনলে আমায়,
ছেড়ে যাবে বলে।
এখন —
বড় কষ্ট হয় অমানুষের ভীড়ে
গৃদ্ধ শকুনির বিষ নিঃশ্বাসে ঊর্ণনাভর মায়াজাল
ক্রমশঃ নিস্তেজ করে দেয়
আমার চেতনাকে।
আমি বিবশ হই,
মৃত্যুকে রোজ চোখের পাতায় রাখি ভালোবেসে।
ভালোবাসি, ভালোবেসে শুয়ে থাকি আলিঙ্গনে, গভীর নিদ্রায়,
কখনও নিদ্রা বিহীন রাতে।
মৃত্যুকেই ভালোবেসে সহবস্থানে বুকের পাঁজরে রাখি।
কখনও সে আসে, ছুঁয়ে যায় গভীর প্রত্যয়ে,
সমস্ত হৃদয় তোলপাড় করে,
স্পর্শে জাগায় অপার্থিব অনুভূতি।
আমি মুগ্ধ হয়ে যাই তার প্রশান্ত সৌমতায়,নির্লিপ্ততায়।
মন্ত্র মুগ্ধ, আবিষ্ঠ চেতনায় তাকে দেখি রোজ,
লোমশ বেড়ালের মত নরম দেহ নিয়ে
সবুজ চোখ জ্বলে তার,
আমি আস্তে করে বলি, – ভালোবাসো আমায়?
সে শুধু বলে, ভালোবাসি বলেই তো আসি রোজ
অবিন্যস্ত চিন্তার ফাঁকে।
সেই থেকে সে আমার বুকের ব্যাথা হয়ে আছে,
জড়িয়ে থাকে ভয়হীন দ্যেতনায়
বুকের ভেতর, কোন প্রোকষ্ঠে জানিনা,
ঘন্টা বাজে ঢং.. ঢং..ঢং।
তারপর, এমনই করেই সকাল হয় , রাতের ছায়া হয় মলিন,
দিগন্তের উজ্জ্বল প্রভায়, চলমান মুহূর্ত ভাসমান,
মৃতুর দু চোখে বাঁচার তাগিদ,
আমিও বাঁচি একটু একটু করে
মৃত্যুকে দু চোখের পাতায় রেখে, সহবস্থানে।