Breaking News
Home / Breaking News / শব্দনগরের পরিচালক রিটন মোস্তফার দুর্দান্ত লেখা ” নারী, ঐ চুপ থাক “

শব্দনগরের পরিচালক রিটন মোস্তফার দুর্দান্ত লেখা ” নারী, ঐ চুপ থাক “

নারী, ঐ চুপ থাক ”
– রিটন মোস্তফা

নারী,
এই শব্দটার ভেতরেই কেমন যেন একটা কোমলতার অনুভব চলে আসে সবার মনে। নারী, এই ছোট্ট একটি শব্দের অবয়বে লুকিয়ে আছে নরম, কোমল, স্নেহ, আবেগ, শিহরণ, পরম শান্তির স্পর্শ। এই একটি শব্দের অধিকারী যে কেন অস্তিত্ব যেন পৃথিবীর সমস্ত সৌন্দর্যের জীবন্ত অস্তিত্ব। নারী, যখন যে ভুমিকাই সেখানেই যেন সে স্বার্থক একটি অস্তিত্ব।

নারী,
হ্যাঁ এই নারীই আবার কারও কাছে কখনও শুরশুরি, কখনো ভোগের, কখনো বিনোদনের, কখনও লালসার, কখনও প্রচণ্ড রকম ব্যবহৃত একটি অস্তিত্ব, যার ব্যবহার করার সময় টুকুই আমাদের কারও কাছে একটু গুরুত্বপূর্ণ দেহ। তার পর ” তুই চুপ থাক, তুই কি বুঝিস? এতো বকিস কেন? সারাদিন প্যানপ্যান করবি না কানের কাছে, যা রান্নাঘর অথবা ঘর সামলা ”

এই সমস্ত মানুষের কিছু অস্তিত্ব আমি খুব কাছে থেকে দেখেছি। যাদের কাছে নারী পরের বাড়ির মেয়ে। হাবাগোবা থাক। ঘরের বাহিরে যাবি না। মাথা গলাবিনা। আর বিশেষ সময় কাছে ডাকবে, জাস্ট ঐ সময় টুকু চলে গেলে ” দূরে থাক “। যেন ভোগের জন্যেই মানুষ গুলোর কাছে নারী একটি অবয়ব মাত্র। ঠিক তাদের জন্য দুটি কথা আজ বলতে চাই। জানি আক্রমণ হবে কমেন্ট বক্স অথবা ইনবক্সে, এতে সমস্যা নেই।

একটি নারী, যাকে ভোগের বস্তু বলেই শুধু মনে করেন। বাড়ির বা সংসারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন না। পরের মেয়ে পরের মেয়ে একটা ভাব সব কিছুতেই প্রকাশ করেন, তারা কি এই কথা গুলো কখনও এভাবে ভেবেছেন?

একটা মেয়ে বা নারী যে বাড়িতে জন্ম নেয় সেখানেই আপনার বাড়িতে আসার আগ পর্যন্ত বেড়ে ওঠে। ওটাই তার পরিচত একমাত্র জগৎ। সেই বাড়ি, সেই পরিবার, সেই আত্মীয়দের সাথে সে বেড়ে ওঠে আর শুধুমাত্র তাদের সম্পর্কেই জানে, চেনে। পরিচিত হয় ঐ পরিবার ঘিরে যে পরিবেশ পরিস্থিতির সাথে। বাবা- মা, ভাই -বোনের সংস্পর্শে থেকে তাদের সহযোগিতাই তাদের ভালোবাসায় বড় হতে থাকে। সঙ্গত কারণেই এই পরিবেশ এই পরিস্থিতি এই স্বজনেরাই তার একান্ত আপন। এদের ছেড়ে যেদিন সে বিয়ের পিঁড়িতে বসে আপনার সাথে সম্পূর্ণ অপরিচিত পরিবেশ, মানুষ, পরিস্থিতির মধ্যে এসে পড়ে শুধুমাত্র সামাজিক রীতি ধর্মীয় রীতির কারণে সেখানে আস্তে আস্তে ফেলে আসা চির চেনা পরিবেশ, পরিস্থিতি এবং আত্মীয়দের ছেড়ে আপ্রাণ চেষ্টা করে দ্রুত আপনার পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নেবার পাশাপাশি নিজের মতামত খুশি ইচ্ছা বিসর্জন দিয়ে আসলে সে কাকে খুশি করটাকেই জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য বা কাজ বলে ধরে এবং মেনে নেয়? এটা কখনও অনুভব করেছেন? আপনি পারবেন ঠিক আপনার নববধুর মতো তার বাড়িতে গিয়ে কোন বিব্রতকর পরিস্থিতির কোন প্রতিবাদ বা নিজের ইচ্ছে গুলোকে তার মতো বিসর্জন দিয়ে বৌ এর বাড়িতে এডজাস্ট হতে? যেমনাটা আপনার স্ত্রী আপনার বাড়ি এসে আপনাদের অজান্তেই ইচ্ছাই হোক আর অনিচ্ছাই হোক নীরবে কোন উল্টা পাল্টা না করে মেনে নেবার জন্য উঠে পড়ে লাগে? বিষয়টাকে অক্ষরের মাধ্যমে প্রকাশ করতে হয়তো অল্প কিছু শব্দের দরকার পরেছে, কিন্ত প্রকৃত ব্যাপারটা একবার চোখ বন্ধ করে ভেবে দেখুন তো যে যাকে কথায় কথায় ধমক দিয়ে বলেন ” ঐ চুপ থাক,, ” সে আসলে আপনার জন্য আপনার সংসারের জন্য গোপনে কত কি হজম করে গেছে, যাচ্ছে? আসার পর থেকে সে কতটা মনের সাথে ফাইট করে আপ্রাণ চেষ্টা করে যায় প্রতিদিন আপনাকে এবং আপনার পরিবারের অন্য সদস্যদের মন যুগিয়ে চলার জন্য?
নিজের চিরচেনা পরিবেশ, পরিস্থিতি, পরিজন পর করে দিয়ে কিভাবে আপনাদেরকে আপন করে নেবার জন্য গোপনে কতটা প্রতিদিন প্রতি মূহুর্তে ত্যাগ স্বীকার করে শেষ পর্যন্ত আপনাদের ই একজন হিসেবে নিজেকে সঁপে দেয়? আপনি হলে কি এই কাজ গূলো করতে পারতেন একটি মেয়ে যেমন একটা নতুন সংসারে আসার পর থেকে গোপনে করতে থাকে আপনাকেই প্রাধান্য দেবার জন্য? কষ্ট পেলেও হয়তো কখনও কখনও চেপে যায় পাছে অশান্তি হয়, পাছে ভুল বোঝা বুঝি হয়? কোন কারণে যদি সন্দেহের জন্ম নেয়? কোন কারণে যদি বিতাড়িত হতে হয়? হতে হয় আমাদের পিছিয়ে পড়া সমাজ চিন্তার স্বীকার হয়ে অপয়া নারী?
কতটা সতর্ক, কটা ততটস্থ, কতটা ধৈর্য্য, কতটা সহ্য, কতটা নিজের ইচ্ছাকে মুখে আশার আগেই আপনার খুশির জন্য পরিবারের শান্তির জন্য গোপনে হত্যা করে?

ব্যবহারও করবেন আবার শ্বশুড় বাড়ি থেকে কেউ কেউ তার ভারটাও নিতে ছাড়েন না। সন্তান উৎপাদনের মেশিন আর ঘর সামলানোর রোবট ছাড়া যাকে পান থেকে চুন খসলেই ” ঐ চুপ থাক ” ” বাড়াবাড়ি করবি না কইলাম ” ” আমাকে না বলে বাহিরে কেন গিছিলি? ” দেখি তোর মোবাইল এর পাসওয়ার্ড দে তো? প্রতিদিন এত কথা কার সাথে বলিস বাপ মা এর নাম করে? অথবা চাহিদার পূরণের জন্য গলা হয়তো একটু নরমাল করেন ” যা তো এখন খুব বিপদে আছি, তোর বাপের ক দশ হাজার টাকা দিক ”

স্বাধীনতার ঝান্ডা স্বপ্নে
নারী ব্যস্ত তোর ভোগ মেটাতে……

এদের এই ত্যাগ, এই বিসর্জন, এই স্বজন ত্যাগ, নিজ স্বপ্ন হত্যা করে তোর স্বপ্নের জন্য বলি দেওয়া মেয়েটা কি ” ঐ চুপ থাক ” পর্যায়ের? চার দেয়ালের খাঁচায় পোষা তোতা পাখি?

পারবি তুই? ওর মতো ত্যাগী, সহনশীল, ধৈর্য্যশীল, এবং নিজের ইচ্ছাকে হত্যা করে ওর স্বপ্ন পূরণের দাস হতে? যেমনটা দাসি ভাবিনস” ঐ চুপ থাক ” মেয়ে অথবা নারীর মতো?

আরে ও তো ঈশ্বরের আশীর্বাদ। তোর স্বপ্ন, শখ আর ভোগ সহ সেবার নেয়ামত। তাহলে ঐ চুপ থাক মেয়েটির গলা টিপে ধরার সাথে সাথে ওর ইচ্ছা এবং স্বাধীনতার কথা বা মূল্যায়ন কি তোর করাটা মানবিক দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে না? ও যদি তোর জন্য এত সব করতে পারে, তুই কেন চড়াও না হয়ে ওকে ওর মূল্যায়নের মাধ্যমেই জীবনের অপরিহার্য অংশ ভেবে সম্মান দিতে পারিস না…..?

( এখানে তথাকথিত ঐ মানুষগুলোর মধ্যে আমি নিজেও হয়তো। নিজেকে জাহির না, বরং আমার উপলব্ধির কথা বলেছি মাত্র)

Powered by themekiller.com