Breaking News
Home / Breaking News / ফরিদগঞ্জে করোনাকালে বাড়ছে আত্মহত্যার প্রবণতা

ফরিদগঞ্জে করোনাকালে বাড়ছে আত্মহত্যার প্রবণতা

নারায়ন রবিদাস, ফরিদগঞ্জ প্রতিনিধি ::
ফরিদগঞ্জে করোনাকালিন সময়ে বৃদ্ধি পেয়েছে আত্মহত্যার প্রবণতা। ৬৫ বছরের বৃদ্ধ থেকে শুরু করে ১৫ বছরের কিশোরীও রয়েছে এই তালিকায়। এমনকি প্রেমিকের আত্মহত্যার কথা শুনে প্রেমিকাও আত্মহত্যা করেছে। এই ঘটনাকে করোনাকালে আর্থসামাজিক অবস্থা পরিবর্তন অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন সচতেনমহল। সচেতন মহল মনে করেন, করোনাকালে সারাবিশে^র মতো আমাদের আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে নানা সমস্যায় সৃষ্টি হয়েছে। কর্মসংস্থান সংকুচিত হওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে সাংসারিক জীবনে। ফলে সৃষ্টি হয় বিশ^াস অবিশ্বাসের দেয়াল। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোও এই সমস্যার পিছনে একটি কারণ। এসব কারণে হতাশায় বিশেষ করে নারীরা আত্মহত্যার পথটি বেছে নেয়। গত ১০ মার্চ থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত ফরিদগঞ্জ থানায় অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে ১৩টির মধ্যে ১০টি”ই নারী।
থানা পুলিশ জানা গেছে, গত ১০ মার্চ থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত ফরিদগঞ্জ থানায় অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে ১৩টি । যার মধ্যে ১২টি গলায় ফাঁস দিয়ে এবং একটি পানিতে ডুবে। তবে বিভিন্ন সূত্র অনুযায়ী এই তালিকা আরেকটি বড়। লোকচক্ষুর আড়ালে আরো কিছু ঘটনা ঘটেছে, যা হয়তা পুলিশের নজরে আসেনি। আশ্চর্যের বিষয় এই আত্মহত্যা গুলোর মধ্যে বালিথুবা পশ্চিম ইউনিয়নেই গত জুন মাসেই ৫টি ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, মুঠো ফোনে কথা বলা নিয়ে দুই বোনের সাথে কথা কাটাকাটির ঘটনাকে কেন্দ্র করে মাদ্রাসা ছাত্রী তানজিলা (১৫) আত্মহত্যা করে। সে চান্দ্রা ছামাদিয়া ফাজিল মাদ্রার নবম শ্রেণীর ছাত্রী ছিল।
পারিবারিক কলহের জেরে হান্নান(৬৫) নামে একটি জামে মসজিদের মোয়াজ্জেম আত্মহত্যা করে। বারপাইকা গ্রামের শাকিল (২৫)নামের এক যুবক নিজ ঘরেই গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। এই ঘটনার ২৪ঘন্টার মধ্যেই আছিয়া আক্তার (১৭)ও গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। স্থানীয় লোকজনের দেয়া তথ্য মতে উভয়ই প্রেমিক প্রেমিকা ছিল। প্রেমিকের আত্মহত্যার কথা শুনে প্রেমিকাও আত্মহত্যা করে। একইভাবে মদনেরগাঁও গ্রামে কামরুল(২০) নামে আরো এক যুবকের বিষ প্রাণে আত্মহত্যা করে। জানা যায়, প্রেমের বিষয়টি তার মা মেনে না নেওয়ায় সে বিষপান করে আত্মহত্যা করে।
মদনেরগাও গ্রামের মো: হোসেন(৩৫) নামে এক ব্যক্তি স্ত্রীর সাথে ঝগড়া করে গলায় ফাঁস দেয়। একই ভাবে হুগলি গ্রামের মেহেরুন্নেছা প্রীতি নামে (১৯) নামে এক গৃহবধু স্বামীর সাথে ঝগড়া করে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। চরমান্দারী গ্রামের মরিয়ম(২০) এক গৃহবধু গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। পুলিশ তার কারণ জানতে না পারলেও স্থানীয় লোকজনের মতে পারিবারিক কলহের জেরেই এই আত্মহত্যা।
এছাড়া দক্ষিণ চরবড়ালি গ্রামের কুসুম বেগম(১৯), ইছাপুরা গ্রামের আয়েশা(২০), মিরপুর গ্রামের আয়েশা (১৯), দক্ষিণ আলোনিয়া গ্রামের আনোয়ারা বেগম(৫৫), লোহাগড় গ্রামের নুসরাত (২৪) এবং সর্বশেষ গত ৮ জুলাই আবেদা সুলতানা মুক্তি (২৮) নামে এক গৃহবধু গলায় ফাঁস দেয়। যদিও তার ভাই জানান, তাকে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। অপরদিকে পুলিশের প্রাথমিক রির্পোটে আত্মহত্যা বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।
অন্যদিকে আরেকটি আত্মহত্যা থেকে বেঁচে গেছে বেলাল (৩০) নামে এক যুবক। বিষপান করার সময় জনৈক গ্রাম পুলিশ দেখে ফেলায় দ্রæত তাকে হাসপাতালে নেয়ায় বেঁচে যায় সে।
দেখা গেছে পুলিশের রেকর্ড অনুযায়ী ১৩টি ঘটনার ১০টির ক্ষেত্রেই আত্মহত্যাকারী নারী।
এব্যাপারে গৃদকালিন্দিয়া হাজেরা হাসমত বিশ^বিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ ড. মোহাম্মদ মোহেবুল্লাহ খান বলেন, করোনাকালে সারাবিশে^র মতো আমাদের আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে নানা সমস্যায় সৃষ্টি হয়েছে। কর্মসংস্থান সংকুচিত হওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে সাংসারিক জীবনে। ফলে সৃষ্টি হয় বিশ্বাস অবিশ্বাসের দেয়াল। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোও এই সমস্যার পিছনে একটি কারণ। এসব কারণে হতাশায় বিশেষ করে নারীরা আত্মহত্যার পথটি বেছে নেয়।
বিষয়টি জানতে চাইলে ফরিদগঞ্জ থানা অফিসার ইনচার্জ আব্দুর রকিব জানান, ঐতিহ্যগত ভাবেই আমরা যৌথ পরিবারে বিশ্বাসী। করোনকালিন সময়ে আমাদের সকলের উচিত সামাজিক বন্ধন যাতে আরো দৃঢ় হয় সেই পদক্ষেপ নেয়া। তবেই আত্মহত্যার প্রবণতা হ্রাস পেতে পারে।

Powered by themekiller.com