Breaking News
Home / Breaking News / যে ভুলের মাশুল দিচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেট

যে ভুলের মাশুল দিচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেট

ক্রীড়া প্রতিবেদক::

টেস্ট ক্রিকেটে ২০ বছর কাটিয়ে দিল বাংলাদেশ। এখনো আঁতুর ঘর গুছিয়ে নিতে পারেনি। কিন্তু নতুন টেস্ট খেলতে আসা আফগানিস্তান সবার আগে আঁতুর ঘরটাই ঠিক করেছে। ফলও পাচ্ছে।
‘আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটে গুরুত্ব দেওয়া উচিত, এটা ২০ বছর আগের কথা হওয়া উচিত ছিল।‘

বাংলাদেশ ২০০০ সালে টেস্ট মর্যাদা পায়। কিন্তু দেশে কখনোই দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটের সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি। এ দেশে ঘরোয়া ক্রিকেটে দীর্ঘ পরিসরের প্রতিযোগিতা শুরু হয় ১৯৯৯ সালে। টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার পর সেটি প্রথম শ্রেণির মর্যাদা পায়। জাতীয় লিগ নামের সেই প্রতিযোগিতাকে অনেকেই ‘পিকনিক ক্রিকেট’ বলে থাকেন। কোনো প্রতিযোগিতা নেই। খেলোয়াড়েরা তাতে খেলে ন্যূনতম কোনো চাপই অনুভব করেন না। পরে বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগ বা বিসিএল নামে একটি প্রথম শ্রেণির প্রতিযোগিতা চালু হলেও অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। দুটি টুর্নামেন্টই হয় কেবল হওয়ার জন্যই। দেশে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের অবস্থা এমন যে সেখানে কেউ ভালো করলেও নির্বাচকেরা তাঁকে জাতীয় দলে ডাকতে খুব একটা ভরসা পান না। অথচ, টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোতে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ভালো করার ওপরই কিন্তু খেলোয়াড়দের অনেক কিছু নির্ভর করে। কিন্তু বাংলাদেশে সেটি হয় না। হবে কীভাবে, ঘরোয়া ক্রিকেটের মান যে কখনোই উন্নত করতে পারিনি আমরা।

একটা সময় ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগ খুব জনপ্রিয় ছিল। দেশ-বিদেশের ক্রিকেটাররা আসতেন এই লিগে খেলতে। টেস্ট মর্যাদা যখন অনেক দূরের ব্যাপার তখনই এই লিগে খেলেছেন ওয়াসিম আকরাম, ফিলিপ ডিফ্রেইটাস, নিল ফেয়ারব্রাদার, অর্জুনা রানাতুঙ্গা কিংবা রিচার্ড ইলিংওয়ার্থের মতো ক্রিকেটাররা। ঢাকার ক্লাবগুলোর হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দর্শকদের আকর্ষণ করত। সাধারণ একটি লিগ ম্যাচ দেখতেই মাঠে ৩০-৪০ হাজার দর্শক উপস্থিত হতো। এই ক্লাব ক্রিকেট কিন্তু আমাদের ক্রিকেটের টেস্ট মর্যাদা প্রাপ্তিতে বড় অবদান রেখেছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে এই ক্লাব ক্রিকেটকেই আমরা দুর্বল করে ফেলেছি। ইদানীং ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি লিগ বিপিএল চালু হয়েছে। অনেক অর্থের ছড়াছড়ি সেখানে। ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকেরা প্রায় সবাই দেশের বড় বড় শিল্প উদ্যোক্তা। কিন্তু ছয়টি আসর হয়ে গেলেও এ থেকে আহামরি কিছু পায়নি বাংলাদেশের ক্রিকেট। চোখে পড়ার মতো একজন খেলোয়াড়ও তৈরি করতে পারেনি এই বিপিএল।

সাকিব আসলে ঠিকই বলেছেন, ঘরোয়া ক্রিকেট নিয়ে আমাদের ২০ বছর আগেই ভাব উচিত ছিল।

ঘরোয়া ক্রিকেট নয়। বয়সভিত্তিক ক্রিকেটই এত দিন বাংলাদেশের ক্রিকেটে নতুন প্রতিভা সরবরাহের মূল উৎস ছিল। আজকের সাকিব, মুশফিক, তামিম, মাহমুদউল্লাহরা এই সিস্টেমেরই ফসল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বয়সভিত্তিক ক্রিকেটেও প্রাণ নেই। নতুন কেউ উঠে আসছে না।

গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ টেস্টে বেশ কিছু বড় দলকে হারিয়েছে। জয় গুলো এসেছে বিষাক্ত স্পিনিং উইকেটের সাহায্য নিয়ে, যেই উইকেটে টিকে থাকাই দায়, আগ্রাসী মেজাজে ব্যাট চালিয়ে কিছু রান তুলে প্রতিপক্ষকে স্পিনে কাবু করাই আমাদের টেস্ট জয়ের ফর্মুলা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সাফল্য পেয়েছি এভাবেই। এই ফর্মুলার বাইরে আমরা টেস্ট খেলতে জানি না। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিলেটে গত বছর টেস্ট শুরু থেকে উইকেটে স্পিন ধরেনি, আমরা হেরেছি। সবশেষ উদাহরণ চট্টগ্রাম টেস্ট। হয়তো আমরা ভুলেই গিয়েছি, টেস্টে ধৈর্য ধরে ব্যাটিং করে প্রতিপক্ষ বোলারদের ক্লান্তি কাজে লাগিয়েও রান করা যায়। আবার হয়তো ভুলেই গিয়েছি, বিশ্ব মানের স্পিন কীভাবে খেলতে হয়। এমন নয় যে আমরা স্পিনে বরাবরই দুর্বল। শেন ওয়ার্ন, মুত্তিয়া মুরলিধরনের বিপক্ষে তো হাবিবুল বাশাররা রান করেছেন! এখনকার রশিদ খানদের বিপক্ষে কোনো জবাবই খুঁজে পাচ্ছে না ব্যাটসম্যানরা। চাপে পড়লে বাংলাদেশ টেস্ট দলের ব্যাটসম্যানদের একটাই জবাব, আক্রমণ আর আক্রমণ। প্রতিপক্ষ বোলারদের সম্মান দিয়ে ডিফেন্সের পরীক্ষা দেওয়ায় বরাবরই ব্যর্থ সিংহভাগ বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান।

এ সবই দুর্বল ঘরোয়া ক্রিকেট, আর দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেট সংস্কৃতি গড়ে না তোলার ফল। ঘরোয়া ক্রিকেট শক্তিশালী হলে পাইপলাইনেও স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়াতেই প্রতিভা চলে আসে। কিন্তু দুর্বল ঘরোয়া ক্রিকেটের কারণে পাইপলাইনেও এখন দেখা দিয়েছে ঘাটতি।
বাংলাদেশ টেস্ট দলের এক সদস্যই বলছিলেন কদিন আগে, ‘ভারতের অনূর্ধ্ব-১৫ দলের ক্রিকেটারদেরও আপনি আউট করতে পারবেন না। আর যখন ব্যাট করবেন, মনে হবে আপনাকে সব সময় চেপে ধরতে প্রস্তুত ওরা। কোনো ছাড় নেই। সহজ রান নেই।’

আর বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের সর্বোচ্চ পর্যায়েও ন্যূনতম চাপটাই অনুভব করে না ক্রিকেটাররা! তাই টেস্ট ক্রিকেটে কদিন পর পর চট্টগ্রামের মতো ফলাফল প্রত্যাশিত, সেটা টেস্ট দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান নিজেই স্বীকার করেছেন।

Powered by themekiller.com