বিশেষ প্রতিনিধিঃ
স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে শাস্তির নির্দেশ দিয়েছেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। প্রাথমিক পর্যায়ে তাদের কারণ দর্শাতে বলা হবে। আওয়ামী লীগের কয়েকজন শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন, উল্লেখযোগ্যসংখ্যক উপজেলা ও পৌরসভা নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের বিপক্ষে কয়েকজন মন্ত্রী-এমপিসহ স্থানীয় নেতাদের অবস্থান নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ তালিকায় কমপক্ষে ১০০ জনের নাম এসেছে।
গত রোববার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ড এবং স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের যৌথ সভায় এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একজন কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারক নেতা সাম্প্রতিক সময়ে অনুষ্ঠিত উপজেলা ও পৌরসভাসহ স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলের ভেতর থেকে দলীয় প্রার্থীর বিরোধিতা করার প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, নৌকা প্রতীকের বিরোধিতাকারীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দেন।
তৃণমূল পর্যায়ে যোগাযোগ করে অভিযুক্তদের তালিকা তৈরি করেছেন দলের চার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান; আট সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ অ্যাডভোকেট, বি এম মোজাম্মেল হক, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, এ কে এম এনামুল হক শামীম, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
ওই তালিকায় কয়েকজন মন্ত্রীর নাম এসেছে। কয়েকজন এমপির বিরুদ্ধেও দলীয় প্রার্থীর বিরোধিতা করার সুস্পষ্ট প্রমাণ পেয়েছেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকরা। তারা অভিযুক্ত নেতাদের তালিকা যাচাই-বাছাই করছেন। অভিযুক্ত নেতাদের মধ্যে দলীয় প্রার্থীর বিরোধিতা করে বিদ্রোহী প্রার্থীকে সমর্থন করার প্রমাণ রয়েছে। তাদের মধ্যে এমপির সংখ্যাই বেশি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ওই এমপিরা তাদের আত্মীয়স্বজন কিংবা অনুগত নেতাকে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে দাঁড় করিয়েছেন। কোনো কোনো এমপি প্রকাশ্যেই দলীয় প্রার্থীর বিরোধিতা করেছেন। এ জন্য তারা নির্বাচনী আচরণবিধিও লঙ্ঘন করেছেন।
যৌথ সভায় অংশ নেওয়া কয়েকজন সিনিয়র নেতা জানিয়েছেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া দলের নেতাদের বিরুদ্ধে দ্রুতই সাংগঠনিকভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ এনে সংশ্নিষ্টদের কাছে কারণ দর্শাও নোটিশ পাঠাবেন। ওই নোটিশের জবাবের ওপর নির্ভর করে সংশ্নিষ্টদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তৃণমূল নেতাকর্মীদের দৃষ্টিতে, বেশ কয়েকটি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে মন্ত্রী-এমপিসহ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার প্রকাশ্য বিরোধিতার কারণে প্রত্যাশিত ফল পায়নি আওয়ামী লীগ। এসব উপজেলার বেশির ভাগে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর পরাজয় হয়েছে। এ নিয়ে দলের ভেতরে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। অনেক উপজেলায় স্থানীয় নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। দলের সভাপতি শেখ হাসিনা নিজেও এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা দলের নীতিনির্ধারক নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কয়েকটি উপজেলার নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া মন্ত্রী ও এমপিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। কেউ কেউ এ বিষয়ে দালিলিক প্রমাণও উপস্থাপন করেছেন। অনেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রীর ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে অভিযোগপত্রও জমা দিয়েছেন।